শীতের পিঠায় তালাকপ্রাপ্তা সাজেদের জীবিকা

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর
০১ ডিসেম্বর ২০২৫

৪০ বছর আগে, এক কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই কালু মিয়া তার স্ত্রী সাজেদা বেগমকে তালাক দেন। এরপর বয়স হলে মেয়েকেও এক সময় বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্ত মায়ের মতোই সংসার করা হয়নি সাজেদার মেয়ে সোনাভানের, তিনিও তালাকপ্রাপ্তা হন। ফলে সোনাভান এসে পড়ে সাজেদার ঘাড়ে।  অভাবের সংসারে অন্যের ঘর গৃহস্থালী কাজ করে টেনেটুনে পার করতেন দিন। কিন্ত বয়স বাড়ায় সে কাজেও তেমন ডাক পান না আর। এ কারণে অনেকটা খেয়ে না খেয়েই চলে তার সংসার। কিন্ত প্রতিবছর শীত আসে সাজেদার জন্য আশীর্বাদ হয়ে। শীতের চার মাস পিঠা বেচে চলে তার সংসার। সাজেদা বেগম নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা।

সোমবার ( ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে দেখা যায়, আনন্দ নগর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে চুলা জ্বলছে সাজেদার। চুড়াল বসানো হাঁড়িতে গরম হচ্ছে পানি। আর পানির বাস্পে সেদ্ধ হচ্ছে ভাপা পিঠা। পাঁচ টাকায় প্রতিটি ভাপাপিঠা পেতে তার চুলার সামনে অপেক্ষা করছে শিশুর দল। দাঁড়িয়ে বা বসে শীতে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।

সাজেদা বলেন, ঢেঁকিছাঁটা চালের গুড়ার সঙ্গে খেজুরের গুড়ের মিশ্রণ দিয়ে গরম পানির ভাঁপে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। আর চালের গুড়ার সঙ্গে পানি মিশিয়ে মন্ড তৈরি করে সেটি মাটির তাওয়ায় ঢাকনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয় চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেওয়া হয় ধনে পাতা, কালো জিরা, শরিষা বাটা, কাঁচা মরিচ পেয়াজ দিয়ে তৈরি ভর্তা। যা পিঠার স্বাদকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

সাজেদা বেওয়া আরো জানান, প্রতিদিন থেকে কেজি চালের গুড়ার পিঠা তৈরি করেন তিনি। চালের গুড়া, খেজুর গুড়, জ্বালানি, অন্যান্য উপকরণ বাবদ খরচ ৩শ টাকা। গড়ে দৈনিক বিক্রি ৬শ টাকা। খরচ বাদে ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। যা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

পিঠা খেতে আসা যুবক আকাশ বলেন, ‘বাড়িতে তো সব সময় পিঠা তৈরি সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে পিঠা খেতে আসেন তিনি। নিজে খেয়ে বাড়ির অন্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যান। এখানে প্রতিটি পিঠা টাকায় পাওয়া যায়।

সাজেদা বেগমের মতো উপজেলার সব হাটবাজার সড়কের মোড়ে শীতের পিঠা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। অস্থায়ী দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি চলে। রস পিঠা, ঝাল পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি হলেও চিতই ভাপা পিঠার ক্রেতাই বেশি। খুবজীপুর এম হক কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বেলাল হোসেন বলেন, ‘শীত আর পিঠা বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। আর শীতের পিঠা ভোজন রসিক বাঙালির অন্যতম প্রধান খাবারও বটে। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে বাড়িতে পিঠা তৈরির সময় বের করা কঠিন। এসব মানুষের জন্য শীতের পিঠা খাওয়ার উপযুক্ত স্থান পথের ধারের দোকান।

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর