গুরুদাসপুরের ওসির ওপর বিশিষ্টজনদের অনাস্থা, প্রত্যাহারের দাবি

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় রীতিমতো তোপের মুখে পড়েছেন গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসমাউল হক। সভায় অংশগ্রহণকারী জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে নানা পেশাজীবী মানুষ তার বিরুদ্ধে নান অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে  ওসির ওপর অনাস্থা এনে তাকে প্রত্যাহারের দাবিও জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেওয়া নারী প্রতিনিধি অঞ্জলী আফছারী ওসির সাথে দেখা করতে না পারার আক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করেন তিনি। সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক নারীকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন। থানার মূল ফটক পেরোলেও ওসির সঙ্গে দেখা করতে দেননি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। বাধ্য হয়ে একই সমস্যা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যেতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, থানায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যেন ওসির সঙ্গে দেখা করতে না পারেন সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে মানুষ ইউএনও কাছে যাচ্ছেন।”

সভায় সংবাদকর্মী দিল মোহাম্মদ, আলী আক্কাছ, রাশিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান আব্দুস সালাম উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা তুলে ধরেন। তারা আরও বলেন, সংবাদসংক্রান্ত বিষয় নিয়েও ওসি গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করছে না।  সংবাদ সংক্রান্ত ব্যাপারে কোনো সাংবাদিকের ফোন ধরেন না তিনি। তাই পুলিশ সুপারের কাছ থেকে বক্তব্য বা তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।

গণমাধ্যমকর্মী রাশিদুল ইসলাম বলেন, গত এক মাসে একই এলাকায় ১৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত হাজার বিঘার সেচ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকরা অভিযোগ দেওয়ার পরও ট্রান্সফরমার উদ্ধার হয়নি। পুলিশ চোরচক্রকেও শনাক্ত করতে পারেনি। এছাড়া দিনমজুরদের অটোভ্যান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চুরি এবং মাদকের বিস্তার বেড়েই চলেছে। এভাবে মানুষ নিঃস্ব হলেও পুলিশ এসব অপরাধ রোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সভায় উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল খালেক বলেন, ‘ওসি আসমাউল হক শক্ত খুটির জোর দেখিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। পুলিশ তো জনগণের সেবক, সেটা মনে করেই ওসিকে চাকরি করতে হবে। আগস্টে অনেক কিছু বদলেছে। ওসি নিজেকে বদলান অথবা বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান।

সাংবাদিক দিল মোহাম্মদ আলী আক্কাছ বলেন, তথ্য চাওয়ায় আগের স্টেশন সিংড়ার এক সাংবাদিককে ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠিয়েছিলেন ওসি। সাংবাদিকদের আন্দোলনে মুখে ওসিকে বদলি করে গুরুদাসপুরে দেওয়া হয়েছে। গুরুদাসপুরে এসেও ওসি অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেছেন। তিনি ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন।

আইনশৃঙ্খলা সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ওসি আসমাউলের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন তিনিও। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সময় মতো পুলিশ চেয়েও পাচ্ছেন না। সচিব এবং জেলা প্রশাসক আসলে ওসি পুলিশি প্রটোকল দিচ্ছে না। মাসে তিনি পুলিশ নিয়ে কোনো সফল অভিযান করতে পারেননি। ১২ সেপ্টেম্বর প্রায় দেড় লাখ মানুষের সমাগমে নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সচিব, ডিআইজি, ডিসি উপস্থিত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ওসির কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাননি তিনি। এতে করে থানা উপজেলা প্রশাসনের সাথে দুরত্ব তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি তিনি উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন।

সভার সদস্য সচিব ওসি আসমাউল হক বলেন, পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতেই তিনি কঠোর হতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে ভুল বোঝা হচ্ছে। নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ফোন না ধারায় ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

 

বিডি২৪অনলাইন/সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর