ইউএনওর ড্রাইভার তুলসী এখন ১০ কেটির টাকার মালিক

কিশোর কুমার, সাতক্ষীরা
৩০ জুলাই ২০২৫

আয় বহিঃভূতভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র গাড়িচালক  তুলসী আড্যের বিরুদ্ধে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তার কোটিপতি বনে যাওয়াকে রীতিমতো কারিশমা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের ভাষ্য, তুলসী আড্য অন্যের সম্পত্তি  দখল, অসাধু  মৎস ব্যবসায়ীদের পুশ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, সরকারি খাল ইজরা নিয়ন্ত্রণ, হাট-বাজার ইজারা নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্মের জড়িয়েছেন। আর এভাবে আয় করা অবৈধ অর্থ দিয়ে গড়ে তুলেছেন মাছের ঘের, স’মিল, বাড়িসহ প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি।

তুলসী আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা এলাকার মৃত মাধব দত্তের ছেলে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

বুধহাটা বাজারের ব্যবসায়ী পলাশ সরদার জানান, তুলসী আড্য এক সময় চাপড়া-আশাশুনি সড়কে বাস চালাতেন। এর  কয়েক বছর পরে বাগিয়ে নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাড়ি চালকের চাকরি। কয়েক বছর যেতে না যেতে নির্বাহী কর্মকর্তার দাপট দেখিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তুলসী। দরিদ্র মানুষের জমি থেকে শুরু করে সরকারি সম্পত্তি দখল ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ড্রাইভার হওয়ার কয়েক বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালে  শেতপুর মৌজায় ৪৯৭ দাগে সাড়ে দশ বিঘা জমি কেনেন তুলসী। এরপর ২০১৩ সালে একই জমি কাগজ জাল করে ১১ বিঘা হিবেবে বিক্রি করেন। এ ছাড়া বর্তমানে শেতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে উপ্তি দেবনাথ শ্রী দেবনাথের ৫ শতক ৩ শতক জমি দখল করে রেখেছেন তিনি।

তিনি আরো জানান, তুলসী মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দশ থেকে পনের কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। অবৈধ এসব অর্থ দিয়ে কিনেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি। এর মধ্যে রয়েছে বুধহাটা বাজারে পাশে সাতক্ষীরার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী  বসির আহমেদের কাছ থেকে কেনা দেড় কোটি টাকা মুল্যের তিনতলা ভবন, ত্রিশ লক্ষ টাকা মূল্যের ছমিল, বুধহাটা বাজারে দেড় কোটি টাকা মূল্যের একতলা বিশিষ্ট মার্কেট, শেতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে কোটি টাকা মূল্যের এক একর জমি, মহেশ্বকাটি এলাকায় ৭০ বিঘা মাছের ঘের।

 

শেতপুর  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লেলিন সরদার জানান,  আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্কুলের মাঠের ২৫ শতক জমি দখল  দখল  করে নেন ড্রাইভার তুলসী। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে কোন ফল পাওয়া যায়নি। গেল ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্কুলের সম্পত্তি ফিরে পান তারা।

 

বুধহাটা এলাকার শ্রীদেবনাথ  জানান, তুলসী আড্য ২০ বছর ধরে তার ৮ শতক  জমি দখল করে রেখেছেন। জমি যেতে গেলে তাকে নানা রকম মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়ারনি করেছেন কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে তিনি সম্পত্তির ফিরে পেতে সাতক্ষীরা আদালতে একটি মামলা করেছেন।

মহেশ্বকাটি এলাকার গৌর মন্ডল নামে এক ঘের মালিক জানান, তার মাছের ঘেরের পাশে ৬০-৭০বিঘা মাছের ঘের রয়েছে তুলসী আড্যের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ড্রাইভার হওয়ার সুবাদে তিনি জমির মালিকদের ঠিকমত হারি না দিয়ে দিনের পর দিন ঘের করে খাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বললে পড়তে হয় মামলার গ্যাড়াকলে। এ জন্য তার সামনে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না কেউ।

ড্রাইভার তুলসী আড্য জানান, আমি সব সম্পত্তি তিলে তিলে সৎভাবে বানিয়েছি। বর্তমানে আমার ছেলে আমার মতো ড্রাইভার হিসেবে সরকারী চাকুরী করছে। বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে নিজেকে সৎ দাবি করে তুলসী জানান, আমি ড্রাইভার হলেও প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ’ মানুষকে খাওয়াই। আমার ইনকামের বহু খাদ আছে। তবে কিভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন, তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি

 

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় জানান, তুলসী আড্য অবসরে গিয়েছেন। বর্তমানে ড্রাইভার না থাকায় তুলসী দু’বছর চুক্তিভিত্তিক মাষ্টাররোলে কর্মরত রয়েছেন। পুশের সিন্ডিকেটের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তুলসী যে বিপুল পরিমাণ যে সম্পত্তি  অর্জন করেছেন, সেটি আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে  তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর