অফিসে ঘুষ দিতে হয় ৭ থেকে ১০ শতাংশ

রিয়াদ আহাম্মেদ, শ্রীবরদী
৩০ জুলাই ২০২৫


শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক নির্ধারিত মসজিদে বরাদ্দ থেকে কেটে রেখে কম অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সাংবাদিকদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন- "কেন টাকা কম দেয়া হলো, সেটা আগে বুঝতে হবে। ব্যান্ডিং, ট্যাক্স-ভ্যাট যায় ১৯. শতাংশ। অফিসে ঘুষ দিতে হয় মিনিমাম থেকে ১০ শতাংশ। ৩০ শতাংশ তো গেলই গা। তোমাদের যেখানে ইচ্ছা বিচার দেও, যা মন চায় করো।"

এদিকে মসজিদের প্রকল্পে সরকারি খরচ ঠিকাদারের লাভের অংশ বাদ দেওয়ার পরেও টাকা কম দেয়ায় স্থানীয় মুসলমান সংশ্লিষ্ট মসজিদের মুসল্লিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলার এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় এডিবির অর্থায়নে উপজেলার সদর ইউনিয়নসহ ৪টি ইউনিয়নের মোট ৭টি মসজিদ ১টি ঈদগাহ মাঠের উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী, মসজিদগুলোর উন্নয়নকাজে রড দেওয়ার কথা। কিন্তু রডের পরিবর্তে বাজেটের চেয়ে কম হারে নগদ টাকা দেওয়া হয়। যদিও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি মসজিদের লোকজন নিয়ে রডের দোকানে গিয়ে ছবি তোলেন।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কুড়িকাহনিয়া মধ্যপাড়া জামে মসজিদে ১লাখ টাকা বরাদ্দের জায়গায় ৫৫ হাজার টাকা, কুড়িকাহনিয়া দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ২লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে ১ লাখ ১৩হাজার, কুরুয়া বাজার জামে মসজিদের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৭৫ হাজার টাকা, পূর্ব মামদামারী জামে মসজিদে ২ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও পশ্চিম মামদামারী জামে মসজিদে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শ্রীবরদী সদর ইউনিয়নের পুরান শ্রীবরদী জামে মসজিদে লাখ টাকা কাকিলাকুড়া বলদিয়ার তালুকদার বাড়ী জামে মসজিদে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে প্রায় একই রকম ভাবে কম অর্থ প্রদান করা হয়।

কুড়িকাহনিয়া দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি বাবর আলী বলেন, "আমাদের ২ লাখ টাকা বাজেট ছিলো। তার মধ্যে আমরা ১লাখ ১২ হাজার টাকা পাইছি। কম টাকা দেওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলেছে, ট্যাক্স-ভ্যাট কেটে নিয়েছে। আপনারা নিলে নেন। আর না নিলে অন্য মসজিদে দিয়ে দিব।"

কুড়িকাহনিয়া মধ্যপাড়া মসজিদের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, "অনুদান ১লাখ টাকা দেওয়ার কথা আছিল। কিন্তু টাকা পাইছি ৫৬হাজর ৫শ।" কুরুয়া বাজার জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার সৈয়দ আলী বলেন, "বরাদ্দ ১লাখ ৫০হাজার টাকা। কিন্তু দিয়েছে ৭৫হাজার টাকা। প্রথমে দিছিলো ৮৫ হাজার। পরে উল্টা ১০হাজার ফেরত নিয়ে গেছে।"

শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, 'অফিসে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তারা তাদের কাজে অনিয়ম করে অফিসের উপর দায় চাপায়।'

তিনি আরও বলেন, 'রডের জায়গায় টাকা দেওয়াটাই কাজে অনিয়ম। ঠিকাদারকে আমরা এখনো কাজের বিল দেইনি। আমি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।'

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিব। অফিস কোন অনিয়ম করলেও তা দেখা হবে।

 

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর