নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে মাংসের প্রধান উৎস ‘গোশত সমিতি’

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর(নাটোর)
০৯ এপ্রিল ২০২৪

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাড়ে ৬শ টাকার নিচে পাওয়া যায় না গরুর মাংস। ছাগল আর মহিষের মাংসের দাম আরো চড়া। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়টায় কেনা সম্ভব না হয় না গবাদি পশুর মাংস। তাই পাড়া বা গ্রাম ভিত্তিক গড়ে ওঠেছে ‘ গোশত সমিতি’। সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে সুবিধা মতো সঞ্চয় করে এ সমিতির সদস্যরা। এরপর উৎসব ঘিরে সবার সঞ্চয় দিয়ে কেনে গবাদিপশু। এরপর সেই মাংস ভাগবাটোয়ারা করে নেন তারা। এতে যেমন আমিষের চাহিদা পুরুণ হচ্ছে, তেমনি উৎসবের দিনে অন্ততঃ ‘মোটা’ মাংস খেতে পারছেন  নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নিম্ন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা।

কয়েক বছর আগে থেকেই ব্যতিক্রমী  গোশত সমিতি'- এর প্রচল শুরু হয়েছে। ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, ইসলামী জালসা এমনকি গ্রামীণ মেলাকে কেন্দ্র করে সমিতির লোকজন গবাদিপশু কিনে মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছেন। লোকজন সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাড়া-মহল্লায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। গোশত সমিতির বাইরেও এ সমিতির আরও নাম রয়েছে-মাংশ খাই সমিতিঅথবা খাই খাই সমিতি। তবে নামে যেটাই হোক সব সমিতির উদ্দেশ্য একই।

মঙ্গলবার ( এপ্রিল) সকালে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাংস সমিতির সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৭০ জন হয়ে থাকে। গুরুদাসপুর পৌরশহরের আনন্দ নগর মহল্লার ভ্যানচালক ষাটোর্ধ রেজাউল জানান, সংসারের তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থায়। ঈদে মেয়ে-জামাই,নাতি-নাতনী এলে তার উপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা যুক্ত হয়। ঈদে গরুর গোশতের চাহিদা থাকে সবার। কিন্তু ভ্যানচালিয়ে একসাথে অনেক টাকায় গোশত কেনা তার জন্য কষ্টসাধ্য। ইতিপূর্বে সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে বছর সমিতির সদস্য হয়েছেন।

একই মহল্লার গোশত সমিতির উদ্যোক্তা সেলিম রেজা জানান, তিনি চার বছর ধরে গোশত সমিতি তত্বাবধান করছেন। এবছর তার সমিতির সদস্য সংখ্যা ৭০ জন। সদস্যরা দৈনিক ১০ টাকা হিসাবে মাসে ৩০০ টাকা করে অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদের আগে সবার গচ্ছিত টাকায় গরু কিনে সমহারে বন্টন করা হয়। শুধু তার গ্রামেই এমন ১০টি সমিতি আছে।

এবছর তারা লাখ ৮৭ হাজার টাকায় দুটি এঁড়ে গরু কিনে গোশত বন্টন করছেন। প্রতিকেজি গোশতের দাম পরেছে ৬৫০ টাকা। বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুশি।

নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম সাহেদ বলেন, এলাকায় গোশত সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাজারে গরুর মাংসের উচ্চমূল্য থাকলেও সমিতির কল্যাণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হয়। ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হচ্ছে।

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর