প্রকল্পটা দেন ইউএনও

৮ হাজার টাকার টেবিলের দাম ৩৫ হাজার টাকা

সম্রাট হোসাইন, পঞ্চগড়
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

৮ হাজার টাকার টেবিল দাম ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।  ৪ হাজার টাকার চেয়ার ১১ হাজার ৩৫২ টাকা,  আর সাড়ে ৫০০ টাকার ফুটবলের দাম ১ হাজার ৩৩৩ টাকা। এমনভাবে দর দেখিয়ে  পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় এডিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের এ এডিপির যে বরাদ্দ তার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজের পছন্দমতো এক ঠিকাদারকেই ৪০ লাখ টাকার সংস্কার কাজ দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে অভিযোগ রয়েছে।

প্রকল্পটির ব্যয় যাচাই ও বিশ্লষণে  দেখা যায়, টেবিলের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট ও প্রস্থ সাড়ে তিন ফুট। এ টেবিল মেহগনি কাঠের মূল্যসহ যাবতীয় ৮ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও প্রকল্পে দাম ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। একইভাবে প্রতিটি চেয়ার চার হাজার টাকার মধ্যে নির্মাণ সম্ভব হলেও দাম ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৫২ টাকা। আর সাড়ে ৫০০ টাকার ফুটবলের দাম ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ টাকা। এক একটি উপাদানের কেনাকাটার অতিরিক্ত ব্যয় সর্বনিম্ন দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়টি টেবিল থাকার কথা থাকলেও ছিল সাতটি, ৪২ টি চেয়ারের স্থানে ছিল ৩০ টি।

স্থানীয় কাঠ ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী নাজিমউদ্দিনসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, টেবিল চেয়ারের যে নকশা, তাতে একটি টেবিল ও একটি চেয়ারে চার-পাঁচ হাজার টাকার কাঠসহ সবকিছু মিলে ১২ হাজার টাকা হলেই দেওয়া সম্ভব।

উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউএনও সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ৮৪ লাখ, রাজস্ব বরাদ্দ প্রায় ৩৯ লাখ টাকা। তার মধ্যে পিআইসি কমিটির মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ, ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে ৪৫ লাখ এবং কোটেশনে নেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকার কাজ।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পছন্দমতো এক ঠিকাদারকে বরাদ্দ দেওয়া ৪০ লাখ টাকার সংস্কার কাজের মধ্যে রয়েছে টেনিস গ্রাউন্ডে ২০ লাখ, বেরং কমপ্লেক্স ১০ লাখ, ইউএনওর বাস ভবন মেরামত বাবদ ১০ লাখ, পিকনিক কর্নারের জন্য ১০ লাখ টাকা।

তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার স্ক্রীমে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নয়টি ডাইনিং টেবিলের দাম ধরা হয়েছিল তিনলাখ ১৫ হাজার টাকা। ১১ হাজার ৩৫২ টাকা ব্যয়ে ৪২ টি ডাইনিং চেয়ারের ব্যয় ধরা হয় চার লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৪ টাকা। মোট ১০ লাখ টাকা বরাদ্দে তেঁতুলিয়ার হাসান এন্টার প্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছিল। টেবিলে গ্লাস দেওয়ার কথা থাকলেও না দিয়ে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাসান বলেন, কাজ যেভাবে ধরাছিল সেভাবেই করা হয়েছে। কাজ শেষ করে আমি আট লাখ পাঁচ হাজার টাকার বিলও পেয়েছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী খান বলেন, অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। প্রাক্কলন যেভাবে আছে, সেভাবে কাজ শেষ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, সে কাজের প্রাক্কলন কোড ৬৮ হাজার টাকা। আমরা তো এতো টাকা দেইনি। প্রকল্প দেওয়াটা আমার কাজ, বাস্তবায়ন করবে প্রকৌশল অফিস।

 

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর