স্মার্টফোন সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশি জানা আছে। এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে অনেকেই কমবেশি জানি ধারণা রাখি। কিন্তু স্মার্টফোন যদি হাতের পরিবর্তে মাথায় থাকে, আর সেখান থেকেই ব্যবহার হয় তাহলে ব্যাপারটি কেমন হয়?
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে। এ নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী রে কার্জউইল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
২০০৫ সালে কার্জউইল তার নিজের লেখা ‘দ্য সিঙ্গুলারিটি ইজ নিয়ার’ নামের একটি বইতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেটা এখন আর আগের মতো কল্পকাহিনি মনে হচ্ছে না। ২০২৯ সালের মধ্যে কম্পিউটার মানবস্তরের বুদ্ধিমত্তায় পৌঁছে যাবে, বইটিতে করা এমন নানা ভবিষ্যদ্বাণী নানা বৈজ্ঞানিক জল্পনাকল্পনার জন্ম দিয়েছে। এ বইয়ে কার্জউইল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ৪৫ সালের দিকে আমরা কম্পিউটারের সঙ্গে একত্র হয়ে অতিমানব হয়ে উঠব।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দ্য অবজারভারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন কার্জউইল। তিনি জানিয়েছেন, দ্য সিঙ্গুলারিটি ইজ নিয়ারার” ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলে। ১৯৯৯ সালে মানুষ ভাবত- এআই সক্ষমতা অর্জনে ১০০ বছর বা তার বেশি সময় লাগবে। তখন আমি বলেছিলাম, মাত্র ৩০ বছর যেতে দিন। দেখুন তারপর কী ঘটে।
কার্জউইল বলেছেন, কম্পিউটারের ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে এআইয়ের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক স্মৃতিশক্তি বাড়বে। পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের যুক্তি এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়াতে উন্নতি করতে সক্ষম করবে। তবে এসব ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি থেকে গেছে। এগুলোর দূর করতে আরও উন্নত অ্যালগরিদম প্রয়োজন হবে, যাতে আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে আরও তথ্য প্রয়োজন হবে। এআই উন্নত (স্মার্ট) হলে নিজের জ্ঞান সম্পর্কে ভালো বুঝতে পারবে। এটি আরও ভালো ও নিখুঁতভাবে মানুষের কাছে জবাব দেবে।
সাক্ষাৎকারে কার্জউইল বলেন, স্মার্ট হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা মস্তিষ্কের সীমা অতিক্রম করতে পারি না। কিন্তু ক্লাউডের কোনো সীমানা থাকছে না। ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা একটা মডেল। মস্তিষ্ক যখন ক্লাউডের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সিঙ্গুলারিটি তৈরি হয়। সিঙ্গুলারিটি একধরনের রূপক, যেটা পদার্থবিদ্যা থেকে নেওয়া।
কার্জউইল বলেন, প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা ও সাইবারনেটিক বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ হতে যাচ্ছে এবং উভয়ই একটিতে পরিণত হবে। এটাকে সম্ভব করতে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, যা মূলত একধরনের ন্যানোবটস বা রোবট আকৃতির কণা তৈরি হবে। মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি ছাড়াই এসব কণা সূক্ষ্ম রক্তনালি দিয়ে মস্তিষ্কে ঢুকবে। ২০৪৫ সাল নাগাদ আমরা বুদ্ধিমত্তা কয়েক লাখ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে পারবো বলেও আশা প্রকাশ করেন এ বিজ্ঞানী।
কার্জউইল বলেন, মনে করুন আপনার স্মার্টফোনটি হাতে না থেকে মাথার মধ্যে রয়েছে। আর কোনো প্রশ্ন যদি আপনার মস্তিষ্ককে করেন, তখন মস্তিষ্ক ক্লাউডে গিয়ে তার একটি উত্তর খুঁজে দেবে। ঠিক যেভাবে ফোন কাজ করে। এটা তৎক্ষণাৎ জানা যাবে। এটা কখন হয়ে যাবে সেটা বুঝতেও পারবেন না। তখন মানুষের আর ফোনের দরকার পড়বে না বলেও দাবি করেন তিনি।