শ্রীবরদীতে ভাগাভাগি করে মসজিদের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত

রিয়াদ আহাম্মেদ, শ্রীবরদী
১৫ জুলাই ২০২৫

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের মাধবপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। স্থানীয়রা আত্মসাতের জন্য প্রকল্পটির সভাপতিকে দুষলেও সভাপতি দোষ চাপাচ্ছেন স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যের ঘাড়ে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় মসজিদটি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২লাখ ১৯ হাজার ৯১৪ টাকা। টাকা থেকে মসজিদের টিন মাটি ভরাটের কাজের পেছনে ৮৫ হাজার টাকা খরচ দেখানো হলেও বাকী টাকার হিসাব নেই। এ উয়ন্নয় কাজের প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে নামমাত্র কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সভাপতি বলছেন, তিনি যে পরিমাণ টাকা হাতে পেয়েছেন তা দিয়েই উন্নয়ন কাজ হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মসজিদের উন্নয়নে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ দিয়ে কাজ করা হোক। এ ছাড়াও মসজিদের টাকা আত্মসাত করে যারা ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তাদের আনা হোক শাস্তির আওতায়।

স্থানীয়রা জানান, মসজিদের এ উন্নয়ন কাজের প্রকল্প সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক হলেও কাজটা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন তার পুত্রবধূ, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর রাবিয়া বেগম এবং তার সহযোগী ওয়ার্ড মেম্বার সিদ্দিক মিয়া। মহিলা মেম্বরের প্রভাবেই সামছুল হককে সভাপতি করা হয় এবং অর্থ আত্মসাতের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনিই। সঠিক তদন্ত হলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মিয়া বলেন, লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ থাকার পরও মাত্র ৮৫ হাজার টাকার কাজ হয়েছে।  আমাদের ওযু টয়লেটের ব্যবস্থাপনা নেই। জনপ্রতিনিধিরা এতো নিচে নামবে, এটা বিশ্বাস করাও কষ্টের। আমরা সমুদয় টাকার কাজ চাই।

মুসুল্লি আব্দুর রহমান বলেন, প্রকল্প সভাপতি সামছুল হক নিজেই বলেছেন, তিনি লাখ ১৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু হাতে পেয়েছেন ৯৫ হাজার টাকা। অথচ কাজে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা কোথায় গেল, তার সঠিক হিসাব তিনি দিতে পারছে না।

একই এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, সভাপতির কাছে টাকার কথা বললে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। টাকার খবর নাই কাজের খবর নাই। আমরা এর প্রতিকার চাই।

বিষয়ে প্রকল্পটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক বলেন, "শুন ব্যাডা (ছেলে) আমি যে বলতেছি- আমি টাকা পাই নাই, এই কথা কেউ বিশ্বাসই করে না। আমারে সিদ্দিক মেম্বার সাথে করে শ্রীবরদী নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়েছে। এ ছাড়াও একটা কাগজে আমার বাড়িতেও স্বাক্ষর নিয়েছে। তারা আমাকে লাখ ১৯ হাজার টাকার কথা বললেও দিয়েছে মাত্র ৯৫ হাজার। আমি এই টাকা দিয়ে মসজিদের কাজ করেছি। এর হিসাব আমার কাছে আছে। টাকা উত্তোলনের সময় আমার ছেলের বউ রাবিয়া বেগম এবং সিদ্দিক মেম্বার ছিলো।"

ব্যাপারে ইউপি সদস্য রাবিয়া বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মসজিদের প্রকল্পের জন্য ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা বাজেট হলেও হাতে পেয়েছি ২ লাখ। বাকি টাকা খরচ হয়েছে। তবে ১৯ হাজার টাকা কোন খাতে খরচ হয়েছে- প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। বাকি টাকার ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি বলতে পারবে বলেও তিনি জানান।

অপরদিকে ইউপি সদস্য সিদ্দিক মিয়ার সাথে টাকার ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে কিছু জানি না।

শ্রীবরদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আমির হোসেন বলেন, সেই মসজিদে প্রকল্প আছে কিনা, আমার এই মুহুর্তে মনে নাই। আমি বাইরে আছি। বিষয়টি দেখে পরে জানাবো।

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টি অবগত ছিলাম না। বিষয়ে কোন অভিযোগও পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর