বিজেপি নেত্রী কর্তৃক মহানবী (স.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে উত্তাল সারা বিশ্ব। ভারতেও বিক্ষোভে দেখাচ্ছেন মুসলমানরা। তবে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সহিংস পথ বেছে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ইসলামী ব্যক্তিত্বরা। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তারা এ আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন- দেশের সংবিধান, আইন ও সম্প্রীতির পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা স্পষ্ট। ধর্মাচরণের প্রকৃত অর্থ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন। ফুফুরার শরিফের পিরজাদা সানাউল্লা সিদ্দিকীর একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, , ‘‘আপনারা কি আইনকে হাতে তুলে নেবেন? আমাদের প্রিয় নবি কখনও অন্য লোককে কষ্ট দেননি। হাসপাতালের রোগী, ডাক্তারেরাও অবরোধে আটকে আছেন। সবাই মিলে জাতিধর্ম নির্বিশেষে দেশকে স্বাধীন করেছি, শান্তিতে বসবাসের জন্য। হাত জোড় করে বলি অবরোধ বন্ধ করেন, আমরা আইনের আওতায় লডাই করি। যিনি অন্যায় করেছেন, তিনি আইনত শাস্তি পান। গোটা দেশ পাশে আছে, বিশ্ব পাশে আছে। হিন্দু ভাইরাও নবিজীকে ভালবাসেন। অবরোধ সরিয়ে নিন। গাড়িগুলো যেতে দেন।’’
বিভেদকামীদের অপচেষ্টার বিষয়ে সানাউল্লা সতর্ক করে আরো বলেন, ‘‘দেশের এক কুলাঙ্গারের জন্য পাঁচটা হিন্দুকে খারাপ বলতে পারি না। ঠিক তেমনই দু’এক জন মুসলিমের কুকীর্তির জন্য দশ জনকে খারাপ বলা যায় না।’’
পরে আনন্দবাজারের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘‘মুরুব্বিদের কাছে যা শিখেছি, তাই বলেছি। বাংলার শান্তি, ভারতের শান্তি সব থেকে বড় কথা। বিভেদকামীদের বিরুদ্ধে আইনের পথেই লড়তে হবে।’’
পিরজাদা সাফেরি সিদ্দিকীও ফুরফুরা শরিফের তালতলা হাটের একটি সভায় শুক্রবার প্রতিবাদের ভুল পথ নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রিয় নবি আমাদের ইমান, ইবাদত, ভালবাসা— সবকিছু। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ অবরোধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া কখনওই তাঁর শিক্ষা নয়। এ সবে উসকানি দিয়ে কেউ কেউ দেশে হিংসা সৃষ্টি করতে চাইছেন। আইন হাতে তুলে নেবেন না। সংবিধান নষ্ট করবেন না। এটা মানুষের কাজ নয়।’’
নাখোদা মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমিও এ দিন বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘প্রতিবাদ করুন, হিংসার আশ্রয় নেবেন না। রাস্তাও আটকাবেন না। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু, মুসলিম মিলেমিশে থাকে। কেউ কাউকে কষ্ট দেবেন না।’’
কাশমি সাহেবের কথায়, ‘‘প্রিয় নবি বলেছেন, রাস্তায় পাথর থাকলে সরিয়ে দাও, তাতে পথচারীদের কষ্ট হবে। ইসলামের শিক্ষা কাউকে কষ্ট দিতে বলে না। আপনারা কেস করুন, এফআইআর করুন। এ সব করবেন না।’’
ফুরফুরা শরিফের হেজবুল্লা সংগঠনের সহসম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘মিছিলের নামে ধ্বংস ও মানুষের ক্ষতি ইসলাম অনুমোদন করে না।’’
বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়া শুক্রবারই এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘‘আর যেন মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো আন্দোলন না হয়।’’