বাড়তি আয় বাড়লেও হুমকিতে বিলের জীববৈচিত্র্য

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর
২১ নভেম্বর ২০২৫

 

চলনবিলে বর্ষার পানি কমে যাওয়ায় বিলে পাওয়া যাচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির শামুক। কর্মহীন কৃষক জেলেরা সেই শামুক সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সংগৃহীত শামুক হাঁস মাছের খাদ্য হিসাবে কিনছেন এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী। এদিকে নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুরের বিলশায় দীর্ঘদিন ধরে শামুক কেনা-বেচা দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, বর্ষায় চলনবিলকেন্দ্রিক রুহাই, বিলশা, চর বিলশা, পিপলা,বামনবাড়িয়া,হরদমার কর্মহীন মানুষ বাড়তি আয়ের আশায় শামুক সংগ্রহ করছেন। এরপর সেগুলো বস্তাবন্দি অবস্থায় ভোরে বিক্রির জন্য চর-বিলশায় আনা হয়। শুধু বিলশা পয়েন্টেই দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার টাকার শামুক কেনা-বেচা হচ্ছে।

বিলপাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বিলের বিভিন্ন অংশ থেকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় এক প্রকার বিশেষ জাল টেনে শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। সংগৃহীত শামুক কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কিনে তারা হাঁস মাছের খাদ্য হিসাবে বিক্রি করছেন।

একজন দৈনিক তিন থেকে চার বস্তা শামুক সংগ্রহ করে থাকেন। মাঝারি আকৃতির একবস্তা শামুক বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। হিসাবে শামুক সংগ্রহ করে একজন দৈনিক -৭শ টাকা আয় করছেন।

শামুক সংগ্রহকারী ফরিদ জানান, বর্ষা মৌসুমে বিলে মাছ ধরে চলে তাদের সংসার। কিন্তু বর্ষার পানি শুকানোর আগমুহুর্তে তাদের হাতে কাজ থাকে না। সময় শামুক বেচেই চলে তার মতো অনেকের অনেকের সংসার।

চর-বালশার শামুক ব্যবসায়ী বকুল হোসেন জানান, বিলশা পয়েন্টে আরো জন ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা স্থানীয় সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিবস্তা ১৭০ টাকায় কিনে তা ১৮০ টাকায় পাইকারী বিক্রি করে থাকেন। সেগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাইকারী বিক্রি করেন। প্রতিদিন / ট্রাক (ছোট আকৃতির) শামুক বেচা কেনা হয়। তিন মাস চলে শামুক কেনা-বেচা।

পাশ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নাদো-সৈয়দপুরের শামুক ক্রেতা সিদ্দিক জানান,তার একটি হাঁসের খামার রয়েছে। ৫শ হাসের জন্য দৈনিক ১০ বস্তা শামুকের চাহিদা তিনি বিলশা থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতিবস্তা শামুক কেনেন ১৮০ টাকায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুক পানিতে থাকা ক্ষুদ্র জীব খেয়ে জলাশয়কে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মাটির উর্বরতা বজায় রাখে। বিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় খুবই প্রয়োজন এটা। কিন্তু নির্বিচারে আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। ফলে চলনবিলের পানি দূষিত হবে মাছের উৎপাদন কমে যাবে। পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও প্রভাবিত হবে।

উপজেলা জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান জানান, শামুককে জলজ প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হলেও আইন অমান্য করে চলছে নিধন। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেলসহ অর্থ দন্ডের বিধান থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় থামছে না শামুক নিধন। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শামুক-ঝিনুক প্রাকৃতির ফিল্টার। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এসব শামুক-ঝিনুক পচে গিয়ে জমির উবর্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নির্বিচারে কৃষকের বন্ধু শামুক জলজ উদ্ভিদ নিধন হলে মাটির ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, ‘শামুক-ঝিনুক নিধনের বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর