বিলপাড়ে ও নৌকায় মানুষের ঢল, গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ

সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নাটোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) চলনবিলের গুরুদাসপুরের বিলশা পয়েন্টে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা দেখতে বিলশা পয়েন্টে চলনবিল পাড়ে ও বিলের পানিতে নৌকায় যেন ঢল নামে মানুষের।

এদিকে নৌকা বাইচকে ঘিরে পুরো এলাকা মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাড়িতে বাড়িতে মেয়ে-জামাই, আত্বীয়-স্বজনসহ অতিথিদের জন্য পিঠা-পায়েসসহ হরেক পদের খাবারের আয়োজন হয়। বিলপাড়ে বসে গ্রামীণ মেলাও।

নদী দুষন রোধ করি,নির্মল বাংলাদেশ গড়ি প্রতিপাদ্যে  শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর টায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ২ কিলোমিটার দুরুত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার ২১টি নৌকা নিবন্ধন করে। তবে এদের মধ্যে ১০০ ফিট দৈর্ঘ্যের ১২টি প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহনের সুযোগ পায়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে মোটরসাইকেল জিতেছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির নিউ একতা এক্সপ্রেস। দ্বিতীয় হয়ে রেফ্রিজারেটর পুরস্কার জিতেছে শাহজাদপুর উপজেলার নিউ বাংলার বাঘ। তৃতীয় পুরস্কার একটি টিভি জিতেছে আল মদিনা।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে সকাল থেকেই হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর,বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। নির্ধারিত দুরত্ব বজায় রেখে বিলের মাঝখানে দুই দিকে শত শত নৌকায় থাকা দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন এ প্রতিযোগিতা। বাইচের নৌকাগুলোর মাঝি-মাল্লাদের ছন্দোবদ্ধ বৈঠা চালানোর দৃশ্য ও বাদ্যছন্দের তালে তালে গেয়ে উঠা গান দর্শকদের মুগ্ধ করে। বৈঠার তালে তালে জেগে ওঠে ছন্দ-আনন্দ আর দর্শকদের উল্লাস করতালি আনন্দের মাত্র কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।

এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান। অন্যদের মধ্যে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আজিম আহম্মেদ,ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান,নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


এক প্রতিক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেখতে মানুষের ঢল প্রমান করে উৎসবটি কতটা জনপ্রিয়। বিলুপ্তপ্রায় নৌকা বাইচ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছর ধরনের আয়োজনের চেষ্টা থাকবে।

বাইচ উৎসব দেখতে আসা সিংড়ার কতুয়াবাড়ি গ্রামের রকিব বলেন, জন মিলে একটি নৌকা ভাড়া করে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। দুপুরের খাবারের আয়োজনও ছিলো নৌকাতেই। গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।


বিলশা গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, এক সময় প্রতিবছর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। যা ছিলো গ্রামের মানুষের বিনোদনের অংশ। যে বিনোদন আর ঐতিহ্য হারাতে বসেছিলো। জেলা প্রশাসনের এমন আয়োজনকে স্বাগত জানাই। প্রতিবছর এমন আয়োজনের দাবী তার।

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর