ভিন্নমুখী অবস্থানে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দেশের বড় তিন রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, জামায়াত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ভিন্নমুখী অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ সনদ বাস্তবায়নে গণভোট, কেউ গণপরিষদ গঠন চায়। তবে সনদ বাস্তবায়নে দুটি পন্থাকে সাংবিধানিক ক্যু মনে করছে বিএনপি। সেই সেঙ্গ পরবর্তী সংসদে দুই বছরের মধ্যে এ সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা।

এ সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে শুক্রবার ( সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মোট ২৮টি দল তাদের নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে। এর মধ্যে ৩ পৃষ্ঠার মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। এতে উল্লেখ করা হযেছে, প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী গঠিত সরকার বিদ্যমান সংবিধানের স্থলে নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে বিপ্লব না বরংক্যু হিসেবে গণ্য হয় সেটা। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন করার বিপজ্জনক চেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। তাই সংবিধান সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন চায় তারা।

তিন পৃষ্ঠার মতামতের প্রথম দুটোতে জুলাই সনদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের একাধিক উদ্ধৃতি দিয়ে সেটার স্বপক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেছে বিএনপি। ওদিকে জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রশ্নে সনদের স্বপ্নদ্রষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূসের ধারণার বাইরে গিয়ে নানাবিধ নিত্যনতুন ধারণা/পন্থার কথা জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সেগুলোকে সুচিন্তিত বাস্তবসম্মত নয় বলেও মনে করছে বিএনপি।

বিএনপি বলছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়নি। খসড়ায় ৮ দফার অঙ্গীকারনামায় সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটাকে আইনি সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্ভব, অসঙ্গত অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখছে বিএনপি।

বিএনপি থেকে বলা হয়েছে,  জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে কোনো দল বা গোষ্ঠী এরূপ অসম্মানজনক পথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হবে জাতির জন্য। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য তিনটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। মতামতে বিএনপি আরও উল্লেখ করেছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান অত্যন্ত সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত। তাই প্রধান উপদেষ্টার বাস্তবায়ন কৌশলকে সমর্থন করছে তারা। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ বা প্রয়োজন নেই বলেও মনে করছে দলটি।

সংবিধান সংস্কার বিষয়ক সুপারিশ বাদে অন্যান্য আশু করণীয় সুপারিশগুলো দেরি না করেই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বাস্তবায়ন করার কথা বলছে বিএনপি। এ জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ জারি, বিধি প্রণয়ন, প্রশাসনিক আদেশ জারি, প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ বা অন্য কোনো বৈধ পন্থা/কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, আগামীতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কিত সুপারিশ এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত না হওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে। এ সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়ে জাতির কাছে  অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।

ওদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নিজেদের মতামত শনিবার ( সেপ্টেম্বর)  জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবে জামায়াতে ইসলামী। সংবিধানের / অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অথবা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের পক্ষে জামায়ত অবস্থান নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে জামায়াত

এদিকে শুক্রবার ( সেপ্টেম্বর ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রূপরেখা নিয়ে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ সনদ বাস্তবায়নের সর্বোত্তম গণতান্ত্রিক উপায় হিসেবে গণপরিষদ  গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। পৃষ্ঠার মতামতে বলা হয়েছে,

জুলাই সনদ জনগণের সার্বজনীন অভিমত প্রতিফলন করে। তাই এ সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হওয়া জরুরি। একটি গণপরিষদে জনগণ, রাজনৈতিক দল সামাজিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকবে।  এটা সাংবিধানিক কাঠামো প্রদান করবে এবং প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি সুদৃঢ় করবে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংকট বা বৈধতা-সংকট এড়াতে সহায়ক হবে এটা।

 

বিডি২৪অনলাইন/এনএন/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর