৬শ’ টাকা দিয়ে টিসিবির কার্ড পাওয়ার পরিবর্তে শুনছেন গালমন্দ

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আমেনা বেগম, মজিবর মিয়া, রেজাউল করিম, নাছিমা, রোকিয়া বেগম, রুবিয়া বেগম, রহিমা বেগম, বেবি বেগম, মাজেদুল, কফিল উদ্দিন- সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের আশা সাশ্রয়ী দামে পন্য কিনে সংসার চালাবেন। এ জন্য টিসিবির কার্ড পেতে তাদের মেম্বরকে ৬শ’ টাকা ঘুস দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্ড তাদের কপালে জোটেনি, ফিরে পাননি ৬শ’ টাকাও। উল্টো এনিয়ে বার বার ধর্না দেওয়ায় শুনছেন গালমন্দ।

এ ঘটনা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের এ নম্বর ওয়ার্ডে।  নাজিরপুর ইউনিয়নে ট্রেডিং কার্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিতরণে শোনা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ ২৪ অনলাইন ডট কম- এর স্থানীয় প্রতিনিধি।

অনুসন্ধানে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে আর্থিক লেনদেনের সত্যতা পাওয়া যায়। অনেকে বলেছেন, তালিকায় নাম থাকলেও তারা  টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না। অনেকের ফোন নম্বরের সাথে নামের মিল পাওয়া যায়নি।  ওয়াবদা বাজার এলাকায় ওই ১০ জনসহ আরও অনেকে সমেবেত হয়ে সংবাদকর্মীদের কাছে এ বিষয়ে নানা অনিয়ম অভিযোগের কথা বলেন।

নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামপুর চন্দ্রপুরের মহলদার পাড়ার ভুক্তভোগী অন্তত ১০ জনের অভিযোগ, ইউপি সদস্য মতিউর রহমান মতি তাদেরকে ফ্যামেলি কার্ড  দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬শ টাকা নিয়েছেন।  কিন্তু  কার্ড পাননি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত ‘টোকেনের’ মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। এতে চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের পছন্দের লোকজন টিসিবির পণ্য পেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দরিদ্ররা।

নাজিরপুর ইউনিয়নের ফ্যামেলি কার্ডের উপকারভোগী সংখ্যা হাজার ৪৮৯। এ তালিকায় নাম থাকলেও শতাধিক ব্যক্তি পণ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। তালিকার ২৬ নম্বরে থাকা দিনমুজুর শাহিনুর ইসলাম, ১৪৫ নম্বরের মজিবর মিয়া, ৩৭৫ নম্বরের কফিল উদ্দিন, ৩৭৪ নম্বরের মাজেদুল, ১৫৪ নম্বরের আছমা বেগম বলেন, পরিষদ থেকে তারা কোন কার্ড পাননি। চেয়ারম্যানের টোকেনে তার পছন্দের লোকজন পন্য পেলেও তারা বঞ্চিত।

নম্বর ওয়ার্ডের আরমান,মোবারক,রমজানের বলেন, টিসিবির তালিকায় নাম তুলতে ইউপি সদস্য তমিজুর রহমান তমেজকে  জনপ্রতি ৫শ টাকা দিতে হয়েছে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মতিউর রহমান মতির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী টোকেনের মাধ্যমে টিসিবির পন্য বিতরনের কথা স্বীকার করেন। জানান, কার্ড ছাপতে দেরি হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে। আগামী মাস থেকে কার্ডের মাধ্যমে পন্য মিলবে। তিনি আরও জানান, কোন ইউপি সদস্য টাকা নিয়েছেন- বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, তালিকায় নাম থাকলেও টিসিবির পন্য না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বঞ্চিতদের তার কার্যালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। তদন্তে অনিয়ম কিংবা এর সঙ্গে জড়িতদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিডি২৪অনলাইন/সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ/সি/এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর