গণ অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান আগের তুলনায় দৃশ্যমান জোড়দোর হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার ২ হাজার ২৯৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৫৪১টি মামলা করেছে সংস্থাটি। মামলা ও চার্জশিট মিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজার ভিআইপি আসামি হয়ে দুদকের জালে ফেঁসে গেছেন বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সাড়ে ৩ হাজার আসামিরা তালিকায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহেনা, ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, বোনের ছেলে রাদওয়ান, মেয়ে টিউলিপসহ শেখ পরিবারের সদস্যরা; সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এস আলম গ্রুপের মালিক শামসুল আলম, কাযক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের, শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে আসাদুজ্জামান খান, হাসানুল হক ইনু, আনিসুল হক, দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নাজমুল হাসান পাপন, টিপু মুনশি, গোলাম দস্তগীর গাজী, জাহিদ মালিক, নসরুল হামিদ বিপু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিদের নাম রয়েছে। এছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছে এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, নূরজাহার গ্রুপ, অ্যাননটেক্স গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও জেমকন গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
৩ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের চেয়ে চলতি বছরে দুদকের মামলা ও চার্জশিট বেড়েছে। ধরপাকড়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধে রেকর্ড সাফল্য দেখিয়েছে সংস্থাটি। গেল ১১ মাসে ১ হাজার ২০৩ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। চার্জশিট দাখিল করা মামলার সংখ্যা ৩৪৯টি। পাশাপাশি এ সময়ে দুদক বিভিন্ন শ্রেনীর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নতুন করে ১ হাজার ৬৩টি নতুন অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ৩৮২টি সম্পদ বিবরণী নোটিশ দিয়েছে। ২৩০ জন ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিয়ে ৮২টি ফাইনাল রিপোর্ট ও সেই সঙ্গে ৩৯টি পরিসমাপ্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দুদকের তৎপরতায় দেখা গেছে, বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৪৩৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয় সংস্থাটি। এ সময়ে ৩২৮টি মামলা ও ৩৪৫টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। এ বছরের নভেম্বরে কমিশন না থাকায় কোনো অনুসন্ধান বা মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ২২৭টি অভিযোগের পরিসমাপ্তি হয়। মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ৪৮টি মামলার।
এর আগের বছর অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। ৪০৪টি মামলা ও চার্জশিট হয় ৩৬৩টি মামলার। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় ১৩ হাজার ৫৭৯টি অভিযোগ।
বিডি২৪অনলাইন/এনএন/এমকে