বিগত এক যুগে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত ও এক লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যার চেয়ে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। সড়কে এ ধারাবাহিক হত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত একযুগে দেশে ৬৭ হাজার ৮৯০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজায় ৬৭ হাজার জন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ৪৫ হাজার মানুষ মারা গেছে।
সড়কে গণহত্যার জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ভুলনীতিকে দায়ী করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, দেশে স্বাধীনতার আগে নৌ এবং রেলপথে ৮০ শতাংশ, সড়কে ২০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত ছিল। তাই সড়কে দুর্ঘটনা ২০ শতাংশে সীমিত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পরে দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে একের পর এক সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে বেহিসাবি লুটপাট, সড়কে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হয়েছে। বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করায় ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত সড়কে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সড়ক পরিবহন সেক্টরে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ সময় আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের কারণে সড়কের বিশৃঙ্খলা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, লাইসেন্সবিহীন চালক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক, সড়কে ত্রুটি, চালকের মাদক গ্রহণ, বেপরোয়া গতি, অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স দেওয়া, লাইসেন্সবিহীন-প্রশিক্ষণহীন চালকের হাতে যানবাহন তুলে হয়েছে। এসব কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ২০১৪ সাল থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একযুগে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এ সমযে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে এ পরিসংখ্যান পেয়েছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের নীতি ও কৌশল পরিবর্তন না হওয়ায় দুর্ঘটনার লাঘাম টানা যাচ্ছে না। ফলে সড়কে গণহত্যা বন্ধ, যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে এ সেক্টরে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব নয়।
এ পরিস্থিতিতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে-১. হারিয়ে যাওয়া নৌ ও রেলপথ সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে সমন্বিত যাতায়াত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। ২. চাঁদাবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতি, মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে পরিবহনখাত আপাদমস্তক সংস্কার করতে হবে। ৩. ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানজিটের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. সারাদেশে জেলা শহর থেকে উপজেলায় মানসম্পন্ন বাস নামিয়ে যাতায়াতে শক্তিশালী বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।৫ . মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ৬. উন্নত কারিকুলাম তৈরি করে পরিবহন চালকদের রাষ্ট্রের খরচে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ৭. সড়ক দুর্ঘটনার মামলা সরকারি উদ্যোগে আমলে নিতে হবে। প্রতিটি হতাহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে। ৮. সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য পৃথক লেন ও নিরাপদ ফুটপাতের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিডি২৪অনলাইন/এনএন/এমকে