বৈশ্বিক রাজনীতিসহ অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে নানা চাপে পড়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিশেষ করে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সংকট নিরসনে সরকারের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে দেশের শীর্ষ ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে শীর্ষ ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের অচলাবস্থার নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে সংকট নিরসনের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন উদ্ভূত সংকট নিরসনে সরকারের কাছে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা এনবিআরকে ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত মাস থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্দোলন চলমান থাকায় এনবিআরের আওতাধীন দপ্তরগুলোতে প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টার কার্যক্রম চলে। এতে কাঁচামাল খালাস, ইউজ পারমিট (ইউপি) গ্রহণসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগে একদিনেই পাওয়া গেলেও ইউপি পেতে এখন ১০–১৫ দিন সময় লাগছে। তাছাড়া বন্দরে চলমান আন্দোলনের কারণে পড়ে থাকা পণ্য রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে তেমন ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ বাতিলের হুমকি দিচ্ছে।
তারা জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোর্ট ড্যামারেজ বাবদ নির্ধারিত হারের চেয়ে চারগুণ পর্যন্ত বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে ব্যবসার ব্যয়। বর্তমানে যে দেশের রপ্তানিমুখী খাত চ্যালেঞ্জের মুখে, তাতে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা হচ্ছে এ অচলাবস্থা।
ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, বছরের মাঝামঝি জুন-জুলাই মাসে পোশাক, চামড়া, সিরামিক, ওষুধ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন খাতের কারখানাগুলো শীতকালীন পণ্য উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু এ সময়ে কাস্টমস হাউস ও বন্ড কমিশনারেটসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর অচলাবস্থা ভেঙে দিচ্ছে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলা। এভাবে চলতে থাকলে বিদেশি ক্রেতারা তাদের আদেশ বাতিল করে দেবে, চলে যাবে পার্শ্ববর্তী দেশে। এটা দেশের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি বয়ে আনবে।
ব্যবসায়ীরা এনবিআর সংস্কার ও আধুনিকায়নের পক্ষে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিন্তু এনবিআরের চেয়ারম্যান অপসারণ কোনো সমাধান না। এটা উল্টো বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে। উদ্ভূত সংকট থেকে উত্তরণে এখনই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডাকে নিয়ে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমন্বিত সমাধানে পৌঁছানো জরুরি বলেও মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সংকট নিরসনে ব্যবসায়ীরা ৫টি সুপারিশের মধ্যে আছে— ১. এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখা। ২. এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ করার বিতর্কিত অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পুনর্মূল্যায়ন করা। ৩. এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে হয়রানিমুক্ত, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করা। ৪. সাপ্লাই চেইন, বিনিয়োগ, ব্যবসা ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সবশেষ সুপারিশ হচ্ছে- অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে একত্রে সমন্বিত সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া।
বিডি২৪অনলাইন