জট খুলে প্রশংসিত পুলিশের টিম চাটমোহর, শিশু সোহাগীর ঘাতক মা জেলহাজতে

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
০২ জুন ২০২৫

পাঁচ মাস বয়সী সোহাগীর লাশ উদ্ধারের পর যখন জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল-দুধের, কোলের একটা শিশুর সঙ্গে কার, কিসের শত্রুতা, কার এতো ক্ষোভ, তখন পুলিশের দৃষ্টি ছিল- ঘটনার ক্লুর দিকে, অপরাধী শনাক্ত করার দিকে। এ জন্য ঘটনাস্থলেই চলছিল একে একে পুলিশি প্রশ্ন। আর সে প্রশ্নেই আটকে যায় ছদ্মবেশে থাকা সোহাগীর ঘাতক।

সোহাগী হত্যাকান্ড যেমনটা হৃদয় বিদারক,  পুলিশের কাছে থেকে পাওয়া ঘাতকের পরিচয়টা তেমনটাই আতঁকে উঠার মতো। ঘাতক আর কেউ নয়, যে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে, ৫ মাস লালন-পালনও করেছে- সেই মা। সোহাগীর মা নিজে কোলে নিয়ে নদীর ধারে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় পানিতে ফেলে দেয় তাকে। এতে পানিতে ডুবে মারা যায় সোহাগী। নদী থেকে বাড়ি ফিরে মেয়েকে খোঁজ করার ‘নাটক’ করেন। লাশ উদ্ধারের পর কান্নাকাটি, আহাজারিও করতে থাকেন।

এদিকে ঘটনার দিন পার না হতেই, মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে সোহাগী হত্যার জট খুলে ফেলায় প্রশংসায় ভাসছে পুলিশের টিম চাটমোহর। বিশেষ করে আলোচনা হচ্ছে- পাবনার সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আকতার এবং চাটমোহর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মনজুরুল আলমের বিচেক্ষণতা, কর্মতৎপরতা আর দায়িত্বপালনের আন্তরিকতা নিয়ে।

পুলিশ এ হত্যাকান্ডের পেছনে কয়েকটি কারণ পেয়েছে। এর মধ্যে আছে- পারিবারিক অশান্তি, দারিদ্রতা ও দুশ্চিন্তা। আরেকটি কারণকে শনাক্ত করেছে- বাল্যবিয়ের অভিশাপ।

সোমবার (২ জুন) চাটমোহর থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সোহাগী হত্যাকান্ডের আদ্যপ্রান্ত এবং কীভাবে ঘাতককে আটক করা হয়- এসব বিষয় তুলে ধরে পুলিশ। প্রেস বিফ্রিংয়ে কথা বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আকতার এবং চাটমোহর থানার ওসি মনজুরুল আলম।  

 

গত শনিবার (৩১ মে) সকালে জালেশ্বর মন্ডলপাড়া গ্রামে বড়াল নদ থেকে সোহাগীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সোহাগী জালেশ্বর মন্ডলপাড়া গ্রামেরই বাসিন্দা কমল মন্ডলের মেয়ে। সোহাগীর মায়ে নাম শ্রাবন্তী মন্ডল। তিনি কমলের দ্বিতীয় স্ত্রী, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তাকে বিয়ে করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়-  অভিযুক্ত শ্রাবন্তী মন্ডলের বর্তমান বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৫ বছর মাস। শিশু বয়সে সংসার করতে এসে অশান্তিতে পড়েন তিনি। বাচ্চার কান্না, কান্নার কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা, সংসারের সব কাজ একাই সম্পন্ন করা ও শাশুড়ির বকাঝকাসহ খারাপ আচরণের কারণে অতিষ্ঠ মনে হচ্ছিল তার জীবন। তাই রাগের বশে তার মেয়েকে পানিতে ফেলে দেন।

শ্রাবন্তী মন্ডলকে আটক প্রসঙ্গে জানানো হয়, হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য গোপনে ও প্রকাশ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজনসহ সোহাগীর স্বজনদের ধাপে ধাপে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শ্রাবন্তীর কথাবর্তায় অসংলগ্নতা পাওয়া গেলে তাকে নেওয়া হয় পুলিশের হেফাজতে। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। সেই সঙ্গে হত্যার কারণও পুলিশকে জানিয়ে দেন। রোববার আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন শ্রাবন্তী। আদালত অভিযুক্তকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

পুলিশ বলছে, শিগগিরই এ হত্যা মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। মামলায় একমাত্র আসামি হচ্ছে শ্রাবন্তী মন্ডল।

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর