গেল শনিবার রাতে হাত-পা বাঁধা ঈদুল হাসানের ভাসমান লাশ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পরই জানা যায়- ঈদুলের পরিবারের দুর্গতির কথা, দারিদ্রতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা ১৭/১৮ বয়সী এক ছেলের অপ্রকাশিত ইতিহাস। ঘাতকদের পরিকল্পনায় কেবল ঈদুলের প্রাণ-ই যায়নি, তার সঙ্গে ঈদুলের বয়স্ক বাবা-মায়ের ঘরে নেমে এসেছে অমাবস্যার নিকষ অন্ধকার। এদিকে লাশ উদ্ধারের পর ঈদুলের পরিবারের কাছে খাদ্য-আর্থিক সহায়তা নিয়ে ছুঁটে যাওয়া ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী যেন তাদের ঘরের সেই অন্ধকারে চাঁদের আলো!
ঈদুল হাসানের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলো ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম চরকাজিপুর মিলনচর এলাকায়। মা-বাবার অতি আদরের একমাত্র ছেলে ছিল এ ঈদুল। ঈদুল পরিবারের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেছেন রাজিব আহমেদ নামের এক নেটিজেন। তার বাড়ি ঈদুল হাসানের গ্রামেই, প্রতিবেশি।
রাজিব আহমেদের কথায়, ঈদুল হাসানের পরিবারে না আছে জমি, বাড়ি-ঘর; না আছে কোন সম্পদ। যতোটা আছে, তার ৬০ শতাংশই খেয়ে নিয়েছে নদীর ভাঙন।
পরিবারের সদস্যদের অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলছেন, ঈদুল হাসানের বড় বোনের স্বামী নেই। বড় বোনের ছেলেটা নদীর পানিতে ডুবে মারা গেছে। ছোট বোনটা অর্থের অভাবে যথাসময়ে বিয়ে হয়নি। একটা সময় অধিক বয়সী একটা লোকের সাথে বিয়ে দিতে হয় শুধু খাবারের জন্য। বয়োবৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপার্জনক্ষম এ একটা ছেলে দুমুঠো ভাত দিয়ে আসছিল তাদের।
রাজিব আহমেদের পযবেক্ষণে, দুনিয়ায় এতো দুঃখ দিয়ে আল্লাহ একটা পরিবারকে পাঠায়, সেটা তিনি জীবনে দ্বিতীয়টি দেখেনি আর। একটা পরিবার কতোটা দুঃখ সইতে পারে, হয়তো এ পরিবারের পাশে বাসা না হলে সেটাও বুঝতে পারতেন না তিনি।
সংসারের হাল ধরা ঈদুল হাসানের কাজের ক্ষেত্র ও আয় প্রসঙ্গে রাজিব আহমেদ জানিয়েছেন, ঈদুল ছেলেটা অন্যের বাসায় কাজ করতো। একটা-দুটো মহিষও লালন-পালন করতো, বর্ষায় নদীতে নৌকা চালাতো। ভাঙা একটা ঘরে বাবা-মার সাথেই থাকতো। গ্রামবাসী সবাই কিছু সহযোগিতাও করে। এপাশ ওপাশ করে চলে যাচ্ছিল দুমুঠো খেয়ে-পরে চলা এ পরিবার।
এমন একটা পরিবারের সাথে মৃত্যুর পর্যায়ের মতো শত্রুতা থাকতে পারে মানুষের, সে নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রশ্ন রেখেছেন, ঈদুল পরিবারের আমৃত্যু দুমুঠো ভাতের দ্বায়িত্ব কে নেবে।
ওদিকে চাটমোহেরর ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী অভাবী এ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। লাশ উদ্ধারের পরের দিনই ঈদুলের বাড়িতে নিজেই গিয়ে তাদের খাবারসহ আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন। ঘর মেরামতের জন্য ঢেউটিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ মানুষটি যে কেবল ঈদুল পরিবারের পাশেই দাঁড়িয়েছেন, সেটাও কিন্তু না। এর আগেও অভাবী মানুষের খবর পেয়ে তাদের পরিবারের কাছে নিজেই ছুটে গেছেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন তাদের।
বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে