প্রচলিত ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এতে ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে সরকারি চাকুরেদের চাকরিচ্যুত করা যাবে। এছাড়া চাকরি বিধান লঙ্ঘনে দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ বা চাকরি হতে অপসারণ বাবরখাস্ত দণ্ড প্রদান করা যাবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রচলিত সরকারি চাকরি আইনটি সংশোধণের খসড়া করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে এখন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ সুযোগে দাবি-দাওয়া আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে আন্দোলনে সংকটে পড়ে প্রশাসন, এতে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক কার্যক্রম। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ এখনো কাজে অনুপস্থিত থাকে। তাদের বিরুদ্ধে রাতারাতি কোনো সিদ্ধান্তও নেওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রচলিত আইইন সংশোধন করে কঠোরতা আনার বিষয়টি সামনে আসে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯’ আদলে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী ৮ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ের সমালোচনার মুখে এ বিষয়ে আর এগোয়নি সরকার। কিন্তু প্রশাসনে শৃঙ্খলা এখনো না ফেরায় নতুন করে অধ্যাদেশের খসড়া করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মচারীর কোনো কর্মকাণ্ডের কারণে অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করলে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করলে; অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া, নিজ কর্মে অনুপস্থিত বা বিরত থাকলে বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হলে; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করতে উসকানি দিলে বা প্ররোচিত করলে; যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করলে অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন তিনি।
এদিকে অধ্যাদেশের এ খসড়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন অধ্যাদেশের খসড়ার এ বিধানের বিরোধিতা করে গেল বুধবার (২১ মে) যৌথ বিবৃতি দিয়েছে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। সংশোধনের মাধ্যমে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে সংগঠনটির নেতারা। তারা বলছে, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়ন ও পেশাগত বিকশিত করার পরিবর্তে নির্যাতনমূলক কালো আইন, ব্যক্তিগত দাসত্ব ও ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি করে সচিবালয়কে অশান্ত করার অপচেষ্টা চলছে। এতে কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিবেশে তৈরি হয়েছে। তাদের মতে ১৯৭৯ সালে সংবিধান স্থগিতকালে জারিকৃত ১৯৭৯ সালের মতো কঠোর বিধান, কালা-কানুন ও কালো আইন সরকারি কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হলে বর্তমান সরকারের বৈষম্যমুক্ত নীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এহেন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কালো আইন চালু বন্ধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
বিডি২৪অনলাইন/এনএন/এমকে