সাবেক আইজিপি বেনজীরের ভিডিও বার্তা, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাত্ত প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ এপ্রিল ২০২৪


ড. বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। তিনি পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ বাহিনী মানবিক ও জনবান্ধব হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরিচিতি পায়। তিনি যেমন দক্ষ ও শক্ত হাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন করেছেন, তেমন-ই করোনাকালে তাঁর সময়ে সব ভয় ও রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে পুলিশ পাশে দাঁড়িয়েছে করোনা আক্রান্ত পরিবারের মাঝে। তার সময়ে শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরাসরি জাতীয় জরুরি নম্বর-৯৯৯ এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার পাচ্ছেন। 

সম্প্রতি সাবেক এ পুলিশ প্রধানকে নিয়ে একটি গ্রুপ কোম্পানির মালিকাধীন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তাঁর সম্পদের মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূত ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের উচ্চ পদস্থ একাধিক কর্মকর্তা।

এদিকে খবরটি প্রকাশ হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর এসে এক ভিডিও বার্তায় নিজের ক্যারিয়ার, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদ, ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। ` আমার কিছু কথা’ শিরোনামে ভিডিও বার্তাটিতে সংবাদের বিপরীতে প্রকৃত সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাত্ত প্রকাশ পেয়েছে। 

সাবেক পুলিশ প্রধান ড.বেনজীরের ভিডিও বার্তাটি দেখতে এখানে ক্লিক করতে হবে-https://www.facebook.com/share/v/LGk6hBd7Fystbo5U/?mibextid=jmPrMh

এদিকে ভিডিও বার্তায় ড. বেনজীর জানিয়েছেন, খবরটিতে তাঁর নিজের, তাঁর পরিবারের সুনাম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত করা হয়েছে তাঁর সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবসহ দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থান নেওয়া সেসব মানুষ, যারা তাঁকে চেনেন, তাঁর সম্পর্কে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা রাখেন।

ভিডিও বার্তায় খবরটির মানহানিকর ও অসম্মানজন তথ্যের বিষয়গুলো তিনি সাধারণ ও সচেতন মানুষের কাছে পরিস্কার করেছেন। খবরটিতে ২৪টি বিষয়ে মিথ্যা, অপমানজন ও কল্পনা প্রসূত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সামাজিকভাবে তাঁকে চরম হেয় করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বাস্তবতা ও তথ্যভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন ও পেছনের প্রকৃত ঘটনা আর সত্যটা তুলে ধরেছেন সাবেক আইজিপি। ২৪ মিনিটের কিছুটা বেশি ব্যাপ্তির এ ভিডিওটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজে পোস্ট করেছেন তিনি।

ভিডিও বার্তায় বেনজীর জানান, প্রায় দুই বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন। বর্তমানে পাবলিক লাইফ থেকে দুরে নিরিবিলি জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর ও তার পরিবারের সম্পদের বিষয়ে খুবই আপত্তিজনক, মানহানিকর, অসত্য ও বিবৃত তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে। যদিও মুলধারার কোনো গণমাধ্যমে এ নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ হয়নি।

তাঁর অবসর নেওয়ার প্রায় দু’বছর পর এ খবর কেন প্রকাশ হলো, সে বিষয়ে সচেতনভাবেই আলোচনায় না গিয়ে ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে সংবাদটির পেক্ষাপটে প্রকৃত সত্য ও তথ্য তুলে ধরা ব্যক্তিগত ও নৈতিক দায়িত্ব বলে জানান সাবেক আইজিপি।  বলেন, তাঁর এ বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ করা নয় বা বিদ্বেষও ছড়ানো নয়।

সাবেক এ ‍পুলিশ প্রধান জানান, চাকরির সময়ে ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত একটি গোষ্ঠী তাঁর বিষয়ে অবিরত অপপ্রচার এমনকি চরিত্র হননের চেষ্টা করেছে।

কৃষি বিনিয়োগে কোটি কোটি টাকার দরকার হয় না জানিয়ে নিজেদের সম্পদের বিষয়ে বেনজীর জানান, ২০১৪ সালে থেকেই পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ রয়েছে তাঁদের। প্রথমে ছোট বিনিয়োগ করা হয়। এরপর সেখানকার আয় থেকে গত ১০ বছরের ধীরে ধীরে ব্যবসা বৃদ্ধি, মৎস্য খামার পাশাপাশি, ফলজ, বনজ বাগান গড়ে তোলা হয় ও মসলাজাতীয় আবাদ শুরু হয়।‍  এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি যে পরিমাণ টাকায় কেনা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ব্যাংক লোনসহ অন্যান্য সূত্র থেকে তার পরিবারের ঋণ বা দেনা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ব্যবসা থেকে আয়, ব্যাংকসহ অন্যান্য সূত্র থেকে ঋণের মাধ্যমে এগুলো গড়ে তুলেছেন। এ সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য আয়কর নথিতে সন্নিবেশিত আছে বলেও জানান তিনি।

ড.বেনজীন বলেন,  তিনি সরকারি চাকরি করলেও  দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের ব্যবসা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তাঁর চাকরি তাদের এ অধিকারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হতে পারে না।

তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী ২৪ বছর ধরে ব্যক্তিগত ও ব্যবসা আয় থেকে সরকারকে আয়কর দিয়ে আসছেন। ঢাকার আশে তাঁর নিজের বা পরিবারের সদস্যদের বিঘার পর বিঘা কোনো জমি-জমা নেই। পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে ও জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে আসছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, তাঁদের মৎস্য খামার জাতীয় স্বর্ণপদকসহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। বছরের পর বছর শ্রম ও ঘামের মাধ্যমে এ খামার বর্তমান অবস্থায় এসেছে। তাঁর পরিবার কৃষি ও ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ করতে চায়। এ জন্য গোপালগঞ্জে তাঁর জন্মস্থান এলাকায় দুটি প্রতিষ্ঠান করা হয় ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য। ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন হলেও করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। এছাড়া সংবাদের বেশিরভাগ তথ্যই মিথা ও কল্পোনা প্রসূত বলে ভিডিও বার্তায় জানান পুলিশের সাবেক এ প্রধান। এ ধরণের খবর যারা চাকরির ক্ষেত্রে সৎভাবে ও  নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সৎভাবে ও  নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত করবে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে পুলিশের উচ্চ পদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, ড.বেনজীর আহমেদ পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমুল পরিবর্তন আসে পুলিশ বাহিনীতে। তিনি যুগান্তকারী বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরির সুযোগ পান বেকার যুবক-যবতীরা। জাতীয় জরুরী নম্বর-৯৯৯ এর ফোনের মাধ্যমে পুলিশি সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছানো; তৃণমূলে মাদকের কারবার বন্ধ, ইভটিজিং রোধ, চুরি ডাকাতিসহ যে কোনো অপরাধ নির্মূলে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু; জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন; হত্যা ও ধর্ষণসহ যে কোনো অপরাধে দ্রুত ও স্বল্প সময়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে ও তাদের আইনী সহায়তার জন্য প্রতি থানায় নারী ও শিশু হেল্প সেন্টার গঠনসহ পুলিশের অভ্যন্তরীন অনিয়ম-দুর্নীতির শেকড় সমূলে উৎপাটন উল্লেখযোগ্য। মূলতঃ তাঁর এ পদক্ষেপ যাদের পছন্দ হয়নি, এসব পদক্ষেপে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত- তারাই তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন।

 

বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে

 

 

 


মন্তব্য
জেলার খবর