পঞ্চগড়ে চা পাতায় নতুন স্বপ্নে কৃষক

সম্রাট হোসাইন, পঞ্চগড়
১৪ অক্টোবর ২০২৫

পঞ্চগড়ে এক সময়ে কাঁচা চা পাতার দাম কমে যাওয়ায় কেউ বাগান তুলে ফেলছিল। আবার কারো কারো বাগান অযত্নে অবহেলায় নষ্ট পড়ে ছিল। কিন্তু সরকার চা বোর্ডের কৌশলী উদ্যোগ, অনুকূল আবহাওয়া, কারখানা পক্ষ কৃষকের সচেতনতায়  সুদিন ফিরে আসছে কৃষকের। কাঁচা চা পাতার দাম ১২ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি পর্যন্ত।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রবিউল হোসেনের ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে টবে চা চাষে সফলতা অর্জন করলে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের একটি বিশেষজ্ঞ দল এসে পরীক্ষা করে পঞ্চগড় ঠাকুরগাঁও এলাকার মাটিতে চা চাষ সম্ভব।পরে ২০০০ সালে তেঁতুলিয়া চা কাজী এন্ড কাজী বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে সীমান্ত এলাকা তেঁতুলিয়ায়।পঞ্চগড়বাসী আজ থেকে ২০ বছর আগে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো।কিন্তু এখন চা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে।অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে চা।জেলায় চা চাষ হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের যেমন আয়ের পথ তৈরি হয়েছে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। চা চাষে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে হাজার হাজার নারী-পুরুষ লাভবান হচ্ছেন।এই চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।চা বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত আসছে পর্যটক।মুগ্ধ হচ্ছে তেঁতুলিয়ার সমতল ভূমির চা বাগান দেখে।মাত্র কয়েক বছরে ভরে গেছে সবুজের সমারোহে।

চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানা যায়,জেলায় নয় হাজার ৭২৯ দশমিক ৭৩০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে,সরকারের নিবন্ধিত টি এস্টেট বা বড় চা-বাগান ১২ টি।অনিবন্ধিত বড় চা-বাগান রয়েছে ২৮টি।এছাড়া ক্ষুদ্রায়তন নিবন্ধিত চা বাগান এবং অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগানসহ হাজার ৭২৯ দশমিক ৭৩০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে।গত কয়েক বছর চা পাতার দাম কম থাকায় প্রায় এক হাজার একর চা বাগান নষ্ট তুলে ফেলা হয়েছে।২০২৫ সালে সেপ্টেস্বর পর্যন্ত ৩০টি কারখানা মাধ্যমে এক কোটি ৩২ লাখ ২২ হাজার ৯০৯ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।আরো ৩২ লাখ চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা রয়েছে।চা চাষের পরিধি উৎপাদন বিবেচনায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পঞ্চগড়ে চায়ের তৃতীয় নিলামকেন্দ্র চালু হয়েছে।ইতোমধ্যে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল এবং উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে দ্বিতীয় পরিচিতি লাভ করেছে পঞ্চগড়।

সদর উপজেলার সফিকুল,মিজানুর,জব্বারসহ একাধিক কৃষক জানান,চা কারখানার সিন্ডিকেটের কারনে পাতার দাম কম ছিল।মোটকথা আগে চায়ে অরাজকতা ছিল।সরকার পালানোর পর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যায়।এখন চা পাতা ৩১-৩২ টাকা কেজি নিচ্ছে কারখানাগুলো,কোন ঝামেলাও নাই।

স্যালিলেন চা কারখানার ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম জানান,আগে চা পাতার ডালসহ কেটে বিক্রি করছিল কৃষক।এতে চায়ের মান খারাপ হয়ে উৎপাদিত চায়ের দামও কম ছিল।চা বোর্ড কারখানায় নিয়মিত অভিযানসহ কৃষককে সচেতনতায় এখন কৃষক পাতা বিক্রিতে ডালপালা দেয়না।এতে উৎপাদিত চা পাতার মান ভালো হচ্ছে,তাতে দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা মো.আরিফ খান বলেন,আমরা চেষ্টা করছি কৃষকরা যেন তাদের চা পাতার ন্যায্য মূল্য পায়।এখানে নিলাম কেন্দ্র হওয়ার পর আস্তে আস্তে এর উপকার কৃষক পেতে শুরু করেছেন।তারপরও আমরা কারখানার অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। বর্তমানে কাঁচা চা পাতার দাম ৩১-৩২ টাকা কেজি পর্যন্ত নিচ্ছে কারখানাগুলো।

 

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে



মন্তব্য
জেলার খবর