দেশের পুঁজিবাজার এখন পর্যন্ত একটি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সর্ব সাধারণের টেকসই আয়ের খাত হিসাবে তৈরি হয়নি। তাই ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের মতো দেশের পুঁজিবাজার সংস্কার, উন্নয়ন ও বিকাশে একটি টাস্কফোর্স গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। এ জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে চিঠি দিয়েছে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।
চিঠিতে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশে টাস্কফোর্স গঠন ছাড়াও বেশকিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। স্টক ব্রোকারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংকিং, অর্থনীতি, সংবিধান প্রভৃতি খাতের সংস্কারের জন্য কয়েকটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। তাই পুঁজিবাজারের ন্যায় একটি বৃহৎ খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিগগিরই পুঁজিবাজার খাতের সংস্কারের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
পুঁজিবাজারের সংস্কার সংক্রান্ত ডিবিএ’র প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা রয়েছে- পুঁজিবাজার খাতের উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে সুবিধা দিতে সফল হয়নি বিএসইসি। এ বাজার সম্পূর্ণ ইক্যুইটি নির্ভর, ইক্যুইটি ব্যতীত বাজারে আর কোনো পণ্য নেই।
তারা জানায়, গত ২০ বছর ধরে বন্ড মার্কেট আলোচনায় থাকলেও এর বিকাশে কার্যকর কিছুই করা হয়নি। তাই পুঁজিবাজার থেকে সুফল পেতে বিএসইসিকে পণ্যের উন্নয়ন বিকাশকরণ, নিয়ম-নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ে বিচ্যুতি, অপরাধমূলক কার্যক্রম, ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের তদন্ত কাজে এবং এনফোর্সমেন্টের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকাটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের একটি স্বীকৃত পন্থা।
উন্নত বিশ্বের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নিয়ম-নীতি প্রণয়নে উদার হলেও ব্যবহার ও বাস্তবায়নে কঠোর। তাদের প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত মডেল এ দেশের পুঁজিবাজার খাতের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। এ মডেল অনুসরণ করে তারা- এসইসির নিচে একটি স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এসআরও) প্রতিষ্ঠা করেছে। সংস্থাটি সব বাজার মধ্যস্থতাকারীর সমন্বয়ে কাজ করে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রক ও সহায়কের প্রথম সারিতে থেকে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের অন্যায় ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিতে পাঠায়। এ মডেল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরবর্তী ৫-১০ বছরের জন্য পুঁজিবাজারের কৌশল নির্ধারণ করে। আর সেই কৌশল অনুযায়ী পণ্য বিকাশের জন্য মনোনিবেশ করে।
বিদ্যমান কিছু দীর্ঘস্থায়ী পুরনো সমস্যা পুঁজিবাজার বৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে আছে। এর মধ্যে সময় অনুপযোগী এবং পুরনো মার্জিন অ্যাকাউন্ট নীতি, বিনিয়োগকারীর জন্য প্রতিকূল মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা, আইপিওর যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ডেরিভেটিভস, বিকল্প, ভবিষ্যৎ, বন্ড ট্রেডিং, মর্টগেজ-ব্যাকড সিকিউরিটাইজেশন, ইত্যাদি পণ্যের বিষয় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকার কথা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবনায় বলায় হয়েছে- সরকারের বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে পণ্যের বিকাশ অত্যাবশ্যক এবং অপরিহার্য। স্থানীয় এবং এনআরবিদের জন্য ‘সঞ্চয়কে বিনিয়োগে’ রূপান্তরিত করতে তাদের নিজেদের কাজ করা উচিত বলেও জানায় ডিবিএ।
বিডি২৪অনলাইন/ই/এমকে