বিএডিসির বাদাম বীজে গজায়নি চারা, লোকসান ৫-৭ কোটি টাকা

সম্রাট হোসাইন,পঞ্চগড়
১২ মার্চ ২০২৪

পঞ্চগড়ে বিএডিসির সরবরাহ করা চিনা বাদাম বীজে ৭০ শতাংশ চারা গজায়নি। ফলে এ বীজ বপন করায় জেলার ২ হাজার ২০০ জন কৃষকের লোকসান হয়েছে প্রায় - কোটি টাকা। সেই সঙ্গে চলতি মৌসুমে বাদাম আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। লোকসানের ভর্তুকি দাবিসহ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি তাদের। কৃষি প্রণোদনার আওতায় এসব কৃষকের মাঝে এ বীজ চলিত মৌসুমে সরবরাহ করে বিএডিসি।

সরেজমিনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার গলেহাপাড়া, বোয়ালমারী, ফুলপাড়া, শুড়িভিটা, কেচেরাপাড়া, শিতাগ্রাম, ডাঙ্গাপাড়া,সরকার পাড়া,বোদার ঝলইশালসিরি,ফকিরপাড়া,মন্ডলেরহাটের চাষীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এসব এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আবাদি মাঠে চিনা বাদামের চারা গজিয়েছে ২০-৩০ শতাংশ। বাদামের লাইন খুঁড়িয়ে মাটির নিচে দেখা যায়- বীজ কোনটা গোটা আছে, আবার কোনটা পঁচে গেছে।

কৃষকরা জানান, বাজার থেকে কেনা বাদাম বীজ জমিতে যা বপন করেছি, দুএকটা বাদে সব গজিয়েছে।  কিন্তু অফিসের বীজ যেখানে ভাল হওয়ার কথা, সেখানে বাদাম গজিয়েছে পাঁচ হাত পর পর, একশতে ২০-৩০ টা।

বাদাম বিঘায় ফলন হয় ১০-১৩ মন পর্যন্ত। অফিসের বীজে বিঘায় হবে - মন সর্বোচ্চ। কৃষি অফিস আমাদের প্রচুর ক্ষতি করেছে। পঁচা বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পাঁচ উপজেলার হাজার ২০০ জন ক্ষুদ্র মাঝারি ধরনের কৃষককে বিঘা জমির জন্য ১০ কেজি চিনা বাদাম ১৫ কেজি সার বিতরণ করা হয়েছে প্রণোদনের আওতায়।

জেলায় বাদাম রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাজার হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২১ হাজার ৪২০ মেট্রিকটন। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা .৩৮ মেট্রিকটন। প্রণোদনার বাদাম বীজ বপন হয়েছে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি।

কৃষকের হিসাবে ৩০০ হেক্টর জমিতে বাদাম উৎপাদন কম হবে প্রায় ৭০০ মেট্রিকটন। এ বাদামের বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকার মত।

সদর উপজেলার ফুলপাড়া এলাকার কৃষক বলরাম রায় জানান, কৃষি অফিস থেকে সরবরাহকৃত সরকারি বাদাম বীজ দিয়ে যে ১৫ শতক জমি আবাদ করেছি, সেখোনে ২০-৩০ শতাংশ চারা উঠেছে। পাশে আরো ১৫ শতক জমিতে বাজার থেকে বীজ কিনে বপন করেছি, সেখানো সবগুলো চারা উঠে গেছে। কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা নষ্ট, কমদামী পঁচা বীজ দিয়ে আমাদেরকে সবদিকে ক্ষতি করেছে।

বোদার আব্দুর রহিম সিফাত হোসেন জানান, টাকা পয়সা নেই। এ জন্য লোকজনের মাধ্যমে কৃষি অফিস থেকে ১০ কেজি চিনা বাদাম পেয়েছি। ধারদেনা করে হালচাষ লোক নিয়ে আবাদ করেছি। এখন দেখছি, যে পরিমাণ বাদাম গজিয়েছে, তার ফলন দিয়ে হালচাষের টাকা উঠবে না।

কৃষি অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. নঈমুল হুদা সরকার জানান, বাদাম খুব কম গজিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে। এদিকে আমরাও পরিদর্শন করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবো। তাদের বীজ সাধারনত পুরাতন, এ জন্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) উপ পরিচালক মো.মোজাহারুল হক জানান, বাদামের বীজ কৃষকরা যেটা লাগায়, সেটা একশটার মধ্যে একশটা গজায়। আমরা যেটা দেই আগের মৌসুমের বীজ, সেটা হিমাগারে সংরক্ষণ ছিল।আর হিমাগার থেকে বের করে ১৫ দিনের মধ্যে রোপন করতে হবে। বরাবর আমরা বলি নতুন বীজের সাথে পুরাতন বীজের তুলনা করা যাবে না। এটা ৭০ শতাংশ গজায়। বাদাম বীজ আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়ম অনুযায়ী বপন করতে হয়।

 

বিডি২৪অনলাইন/সি/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর