দেশে প্রথমবারের মতো ছত্রাক রোগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। যদিও দেশে এ রোগ শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। এদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মিউকরমাইকোসিস আখ্যা দিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ নতুন নয়, আগে থেকেই ছিল। করোনা যতটা ছোঁয়াচে, এটি ছোঁয়াচে নয়। কারা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, এ রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে করণীয় বিষয়ে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভারতে রোগটি চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন এ ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
দেশে এ রোগে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তির বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জে, ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন; তিনদিন আগে মারা যান। মঙ্গলবার মাইক্রোবায়োলজির প্রাথমিক পরীক্ষায় তার নমুনায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আরও একজন এ রোগের উপসর্গ নিয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ হাসপাতালে ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর এবং ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেক রোগীর দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়।
বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি বাদে আরো একজনের মিউকরমাইকোসিসের সব ধরনের উপসর্গ আছে। এখনও কালচার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তারপরও তার চিকিৎসা শুরু করে দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়ার কোনো তথ্য তারা এখনো পাননি। তবে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে, বিশেষজ্ঞরাও করণীয় নির্ধারণ করছেন। শিগগিরই রোগটির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গাইডলাইন দেয়া হবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক রোগ প্রধানত করোনা রোগীদের মধ্যে ছড়াচ্ছে। ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত, মাত্রা ছাড়া স্টেরয়েড নিলে, বেশি দিন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকলে অথবা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝঁকি বেশি। শাকসবজি, মাটি, ফল, একই মাস্ক প্রতিদিন ব্যবহারে এ রোগ ছড়াতে পারে। উপসর্গের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, নাক ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, রক্তবমি থাকে।
অণুজীববিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মিউকোরমাইকোসিস নতুন ছত্রাক নয়, পরিবেশেই আছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম— এমন ব্যক্তিদের এ ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। শরীরের যে কোনো স্থানে এর সংক্রমণ হতে পারে। নাকের আশপাশে ও চোখে সংক্রমণ বেশি হয়। চোখে সংক্রমণ হলে দ্রুত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত স্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ায় কালো হয়ে যায়। তাই একে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বলা হয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত এক-দুই জন রোগী পাওয়া গেছে। তাই আমাদের আগে থেকে সাবধান হতে হবে। ভয়ের কিছু নেই, আতঙ্কের কিছু নেই। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে এ ফাঙ্গাসের জন্য যে ধরনের ওষুধ প্রয়োজন, সেটা যেন এখন থেকেই তৈরি করে।
এমকে