প্রাথমিকভাবে বিএনপির দলীয় মনোয়ন দেওয়ার পরও পাবনা- ৩ আসনে চলছে প্রার্থী নিয়ে বিশ্লেষণ। ‘নির্বাচনী সরল’ অংকের সমীকরণে শেষ পযন্ত চুড়ান্ত মনোনয়নের যোগ-বিয়োগ নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। ‘স্থানীয়’ ও ‘বহিরাগত’ প্রার্থী ইস্যুতে মাঠে বইছে আলোচনার বাতাস, হচ্ছে আন্দোলন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরও স্থানীয় দুই নেতাসহ বিএনপির একটা অংশের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বাগড়া দিয়েছেন এ নিয়ে। ওই দুই নেতা অনেকদিন বিপরীত মেরুতে থাকলেও সম্প্রতি একট্রা হয়েছেন। যৌথভাবে কর্মসূচিও পালন করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে এ আসনের ৩ উপজেলায় বিশেষ করে চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত গাঁও থেকে শুরু করে সদর সব জায়গাতেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাঁচ্ছে- শেষ পযন্ত চুড়ান্তভাবে কে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন? দলীয় স্বার্থে ও মধ্যস্থতায় এক হয়ে যাবে কী ৩ জনই? বাগড়া দেওয়ার পেছনে স্বার্থ কী? - সাধারণ মানুষের এসব প্রশ্নের পেছনে নানা যুক্তি নানাজন নিজের মতো করে ব্যাখা করলেও সার্বজনীন যৌক্তিক জবাব পাওয়া যায়নি। ফলে শেষমেশ অঙ্কের ফল এসে আটকে আছে যোগ-বিয়োগে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকের ভাষ্য হচ্ছে- রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। পরিস্থিতি কখন, কোন দিকে মোড় নেবে- সেটা সময়ই বলে দেয়। তবে মতভেদ বেশিদিন থাকবে না বলেও মনে করছেন তারা। কারণ হিসেবে বলছেন, সহমতে আনতে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে ‘দলীয় স্বার্থ’। এরপরও সমাধান না আসলে ব্যবহার হতে পারে ‘বহিস্কার’ অস্ত্র। আর এটা ব্যবহার করলে দৃশ্যত দলীয় নেতাকর্মীদের নিজের পাশে পাবেন না বহিস্কৃত নেতা। দলীয় পদ-পদবী না থাকলেও কিছু করারও থাকবে না সাংগঠনিকভাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, চুড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার পর সিংহভাগ নেতাকর্মী প্রকাশ্যেই দলীয় প্রতীক নিয়ে মাঠে কাজ করবেন। সে ক্ষেত্রে কারো ব্যক্তি গ্রহণযোগ্যতা ও জনমত, এমনকি ভোট ব্যাংকের প্রভাব থাকলেও ভোটের মাঠে সেটা খুব প্রভাব ফেলবে না। কেননা দলীয় সমর্থকদের একটা বড় অংশই দলীয় প্রার্থীকে বেছে নেবেন ভোটে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য হচ্ছে- দলীয় প্রতীকের ক্ষেত্রে ‘বহিরাগত’ বা ‘স্থানীয়’ প্রার্থী ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলবে না। কেননা ব্যালটে থাকবে প্রতীক, মানুষ ভোট দেবেন প্রতীকেই। সে ক্ষেত্রে দলীয় জায়গা থেকে ধানের শীষের মানুষ ধানের শীষের বাইরে যাবেন না।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের ভাষ্য- যাকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তার রাজনৈতিক শেকড় অনেক গভীরে, পুরোপুরি পোক্ত। লেখাপড়া থেকে শুরু করে রাজনীতির মাঠের অভিজ্ঞতা- কোনো দিক দিয়েই ঘাটতি নেই তার। এমনি এমনি একটা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পাননি তিনি, দায়িত্ব পাওয়ার পর দীর্ঘদিন সেই দলের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। দলের হাইকমান্ড থেকে গ্রিণ সিগন্যাল না পেলে খামোকা এ আসনে নির্বাচন করতে আসেননি তিনি। একটা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নীতিনির্ধারকদের কাছে তার আলাদা একটা অবস্থান রয়েছে। সব মিলে হিসাব করলে হেভিওয়েট প্রার্থীদের তালিকায় তার নাম থাকবে, এটা স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষে তাকে পরাজিত করা দরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ আসনের বাকি দুই উপজেলায়ও ভোটার রয়েছে। এ দুই উপজেলা থেকে এখনো বিএনপির কোনো নেতার প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা যায়নি। ‘আসন’ বাদ দিয়ে ‘উপজেলা’ বিবেচনায় নিলে ওই দুই উপজেলার ভোটারদের কাছে ৩ জনই ‘বহিরাগত’ কি-না, সে প্রশ্নও তুলছেন তারা। কেবলমাত্র ‘বহিরাগত’ তকমা লাগিয়ে ‘স্থানীয়’ প্রার্থীর দাবিতে আন্দোলন করে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করা কতটা সহজ হবে- সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। তবে বেশিরভাগ আন্দোলন বিফলে যায় না বলেও মনে করছেন তারা।