দেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র এ প্রস্তাব পুরোটাই বাস্তবায়ন করলে বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে ৭৮ শতাংশের মতো বাড়বে। প্রস্তাবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ধাপে ধাপে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভতুর্কি শূণ্যে নামাতে সব মিলে চার ধরণের প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে।
ভর্তুকি শূন্যে নামাতে বাল্ক মূল্যহার প্রায় ৮০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ বৃদ্ধির ফলে বিতরণ কোম্পনি ও সংস্থাগুলোর সৃষ্ট লোকসানও শূন্যে নামাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিতরণ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর গড় ট্যারিফ হচ্ছে আট টাকা ২৫ পয়সা। বিদ্যমান বাল্ক ছয় টাকা ৭০ পয়সা ট্যারিফে গড়ে ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছে তারা। এর সঙ্গে বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি করলে লোকসান অনেক বৃদ্ধি পাবে তাদের। এ লোকসান শূন্যে আনতে খুচরা পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে হবে।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাল্ক মূল্যহার ছয় টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ১১ পয়সা করতে হবে। এর সঙ্গে বিতরণ লস, বিতরণ কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত করলে খুচরা মূল্যহার ভারিত গড়ে ১৪ টাকা ৬৮ পয়সা করতে হবে। বিদ্যুতের মূল্যহার গড়ে ছয় টাকা ৪৩ পয়সা বা প্রায় ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর- প্রতি মাসে পাঁচ শতাংশ বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে। এতে আগামী জানুয়ারি থেকে কোনো ভর্তুকি দিতে হবে না। এ ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ মূল্যহার ফেব্রুয়ারিতে ১১ শতাংশ, মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে বিদ্যুতের দাম।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতি মাসে ১০ শতাংশ বাল্ক মূল্যহার বাড়াতে হবে। এতে পরের মাস থেকে আর ভর্তুকি দিতে হবে না। সেক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশ, মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৯ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে বিদ্যুতের দাম।
তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাস বাল্ক মূল্যহার ১৬ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। এতে নভেম্বর থেকে ভর্তুকি লাগবে না। এ ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ ফেব্রুয়ারিতে ২১ শতাংশ এবং মে, আগস্ট ও নভেম্বরে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে বিদ্যুতের মূল্য।
চতুর্থ প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে ৪০ ও জুলাইতে ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে বাল্ক মূল্যহার। এতে জুলাই থেকেই ভর্তুকি লাগবে না। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণসহ ফেব্রুয়ারিতে ৪২ শতাংশ ও জুলাইতে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে বিদ্যুতের দাম।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগে চারটি প্রস্তাবই যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। প্রথম প্রস্তাবটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে দফায় দফায় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কেননা প্রথম প্রস্তাবে প্রতি মাসে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে চতুর্থ প্রস্তাবে মাত্র দু‘বার মূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়বে। কিন্তু একবারে ৪২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব গ্রাহকদের পাশাপাশি সার্বিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক হতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করে কোন প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিডি২৪অনলাইন/এন/এমকে