ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইরানে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পেছনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরাইল। তাদের পরিকল্পনাতেই এসব হয়েছে। সোমবার ইমাম হাসান আল মুজতাবা (আ.) ইউনিভার্সিটি অব অফিসার অ্যান্ড পুলিশ ট্রেনিং-এ যৌথ শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেছেন, 'আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসবের পরিকল্পনায় রয়েছে আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং তাদের অনুসারীরা। ইরানের সঙ্গে তাদের সমস্যা হলো এই দেশের শক্তি, স্বাধীনতা ও উন্নয়ন। তবে ইরানি জাতি এসব ঘটনায় নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরেছে এবং ভবিষ্যতেও যেখানেই প্রয়োজন হবে সাহসিকতার সঙ্গে ময়দানে অবতীর্ণ হবে।'
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী বাসিজ এবং ইরানি জাতি সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে। অবশ্য ইরানি জাতি অতীতের মতো এবারও নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে এবং ভবিষ্যতেও এমনটিই ঘটবে। ভবিষ্যতেও শত্রুরা যেখানেই নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাবে ঈমানদার ইরানি জাতিই সাহসিকতার সঙ্গে তা রুখে দেবে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরানি জাতিকে আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.)'র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আলী (আ.)'র মতো ইরানি জাতি মজলুম, তবে একই সঙ্গে শক্তিশালী। তিনি আরও বলেন- একজন তরুণী মারা গেলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় আমিও ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু এই ঘটনার তদন্তের আগেই কোনো বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই কিছু লোক প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাস্তায় নেমে অনিরাপত্তা সৃষ্টি করবে, কুরআনে আগুন দেবে, পর্দানশীন মহিলাদের মাথা থেকে টেনে হিজাব নামিয়ে ফেলবে এবং মসজিদ, হোসাইনিয়া ও মানুষের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে- এগুলো স্বাভাবিক কোনো প্রতিক্রিয়া নয়।
পরিকল্পিতভাবে এই নৈরাজ্য ও সহিংসতা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, এই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও তারা অন্য অজুহাত সৃষ্টি করত যাতে ফার্সি পহেলা মেহের (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশে অনিরাপত্তা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা ও ইসরাইলের এই পরিকল্পনায় তাদের বেতনভোগীরা এবং বিদেশে বসবাসরত কিছু বিশ্বাসঘাতক ইরানি সহযোগিতা করেছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন- কোনো ঘটনা শত্রুদের পরিকল্পনায় ঘটেছে এমন কথা বললে কিছু লোক প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং বিরোধিতা করে। তারা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ও ইহুদিবাদীদের পক্ষ নিয়ে নানা কথাবার্তা, বিশ্লেষণ ও প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরে বলতে চায় এগুলো বিদেশিদের কাজ নয়।
তিনি বলেন, বিশ্বে এমন নৈরাজ্য ও সহিংসতার ঘটনা অনেক ঘটে। ইউরোপে বিশেষকরে ফ্রান্সের প্যারিসে কিছু দিন পরপরই এমন সহিংসতা দেখা দেয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কি এমন ঘটেছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ সেখানকার এমন ঘটনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং বিবৃতি দিয়েছে? এমন ইতিহাস কি আছে যে, তারা বার্তা দিয়ে বলেছে আমরা তোমাদের পাশে আছি? এমন ইতিহাস কি আছে যে, মার্কিন পুঁজিবাদ এবং সৌদি আরবসহ আঞ্চলিক কিছু সরকারের মতো মার্কিন অনুচরদের মদদপুষ্ট গণমাধ্যম ঐসব দেশের বিশৃঙ্লখা ও সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে? কখনো কি এমনটা হয়েছে যে, মার্কিনীরা ঐসব দেশের বিশৃঙ্লখা সৃষ্টিকারীদেরকে বিশেষ হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে যাতে তারা সহজে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পারে? কিন্তু ইরানে বিশৃঙ্লখা সৃষ্টিকারীদের প্রতি এ ধরণের সহযোগিতা ও সমর্থনের ঘটনা বহু বার ঘটেছে। তাহলে কিছু লোক কীভাবে এসব ঘটনায় বিদেশি হস্তক্ষেপ দেখতে পায় না এবং কেন তারা বুঝতে পারে না এসব ঘটনায় অন্যদের হাত রয়েছে?
ইরানে একজন তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় আমেরিকার দুঃখ প্রকাশ পুরোপুরি মিথ্যাচার বরং ঘটনা ঘটানোর জন্য অজুহাত পাওয়ায় তারা আনন্দিত-এ কথা উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, দেশের তিন বিভাগের কর্মকর্তারা ঐ ঘটনার পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিচার বিভাগ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে এই ঘটনায় অপরাধ হয়েছে কিনা অথবা অপরাধী কে তা বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তদন্তের অর্থ এটাই। এ অবস্থায় সেবাদানকারী একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ভুল করেছে এমন আশঙ্কা থেকে সংস্থাটিকে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই। এসবের পেছনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং বিদেশি নীতি নির্ধারকদের ভূমিকা রয়েছে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তারা (শত্রুরা) ইরানের উন্নয়ন চায় না। এই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বন্ধ করতে, রাস্তাঘাটে অনিরাপত্তা ছড়িয়ে দিতে এবং কর্মকর্তাদেরকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ব্যতিব্যস্ত রাখতে পরিকল্পনা করেছে।
শত্রুরা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ইস্যুতে হিসাব-নিকাশে ভুল করেছে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি বেলুচ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করেছি। তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি অনুগত। কুর্দি জনগোষ্ঠী হচ্ছে ইরানের সবচেয়ে উন্নত জনগোষ্ঠীগুলোর একটি। তারা মাতৃভূমি, ইসলাম ও এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি অনুরাগী। এ কারণে তাদের পরিকল্পনা সফল হবে না।'
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থার বিরোধী তাই নয় বরং তারা পাহলভি (রাজতান্ত্রিক) আমলের অবস্থা ফিরে পেতে পায়, যে ব্যবস্থা ছিল তাদের জন্য পরিপূর্ণ অনুগত দুধেল গাভীর মতো।