আনিসুর রহমান এরশাদ
একদিকে দেশে দেশে চলছে মুসলিম নির্যাতন। মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে। এমতাবস্থায় কোনো প্রকৃত মুসলমান নিছক আনন্দ করতে পারে না। বিশেষ করে ইসরাইলের মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্যে ঈদ হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজায়। লাশের মিছিল নিয়েতো আর আনন্দ উদযাপন করা যায় না।
অন্যদিকে করোনায় ম্লান ঈদের আনন্দ। সারাবিশ্ব আজ করোনা আক্রান্ত। স্বাস্থ্য সংকট আর অর্থনৈতিক দুরবস্থায় উদযাপনের সমারোহ নয়, সহমর্মিতাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানায় আতঙ্ক ও ঝুঁকি বাড়ছে। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকিও রয়ে গেছে।
চীনে উইঘুররা চরম অত্যাচারিত। বন্দী শিবিরগুলোতে চলছে অমানবিক নির্যাতন। মসজিদগুলো রুপান্তরিত করছে শৌচাগারে। পবিত্র কুরআনও পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হচ্ছে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে- ইসলাম ধর্ম প্রচার করা, নামাজের জন্য আহ্বান করা, ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। উইঘুরদের গণবন্দী করা হচ্ছে, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ চলছে, জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনিরা নিজ আবাসভূমিতেই পরবাসী, নিজ দেশেই পরাধীনের মতো জীবন কাটাচ্ছে। গোটা ফিলিস্তিনই যেন এক উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে। আকাশে-বাতাসে আর্তনাদ আর হাহাকার। মসজিদে নামাজরত নিরস্ত্র মুসল্লিদের গুলি করা হচ্ছে। গভীর রাতে ঘুমন্ত মানুষদের ওপর বিমান হামলা করা হচ্ছে। পবিত্র ভূমিকে অপবিত্র করা হচ্ছে। বইছে রক্তের গঙ্গা।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা চরম নির্যাতিত। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ মুসলমান বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, মিসরসহ অনেকে দেশেই মুসলমানের হাতেও মার খাচ্ছে মুসলমান। কোথাও কোথাও মুসলিম নিধন করছে অমুসলিমরা, আর কোথাও কোথাও মুসলমানের হাতেও মুসলমান নিরাপদে নেই। কাশ্মীরেও অনেকদিন যাবত ঘটে চলছে মানবিক বিপর্যয়। পৃথিবীর ভূস্বর্গকে নরক বানানো হয়েছে! স্বপ্নের মতো সুন্দর ভূখন্ডের বাসিন্দারাও শান্তিতে নেই। জীবন যেখানে কঠিন, জুলুম যেখানে সর্বত্র, বিদ্যমান অবরুদ্ধতার কঠিন পরিস্থিতি- সেখানে ঈদের আনন্দ ফিকে!
শ্রীলংকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অনেক মুসলমানের জানমালের ক্ষতি হয়েছে। রাশিয়ার চেচনিয়া ও দাগেস্থানে মুসলিম নির্যাতন চলছে দীর্ঘকাল থেকে। ইউরোপ ও আমেরিকায়ও ইসলাম বিদ্বেষ চলছে অনেকদিন ধরে। সীমাহীন বর্বরতা আর চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কোথাও ইহুদিদের দ্বারা, কোথাও খ্রিষ্টানদের দ্বারা, কোথাও হিন্দুদের দ্বারা। যখন সন্তানদের ধরে নিয়ে ক্যাম্পে রাখা হয়, যখন প্রিয়জনকে চোখের সামনে হত্যা করা হয়, দাড়ি রাখা ও রোজা রাখাকে ধর্মীয় চরমপন্থা বলা হয়, নামাজের জন্য মসজিদ নয় বলে ঘরে ফিরে যেতে বলা হয়- তখনকার ঈদ আসলে আনন্দের থাকে না!
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুসলমানদের এত বেশি রক্ত ঝরছে, লাশের পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে যে মুসলমানরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত-বঞ্চিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসিত পশ্চিমা বিশ্বেও মুসলমান ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার। সবমিলিয়ে করুণ অবস্থা! আজানে বাধা দেয়া হচ্ছে, নামাজ আদায়ে বাধা দেয়া হচ্ছে, মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, মুসলিম তরুণীদের ধর্ষণকারীদের বাধাহীন উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে।
করোনার মধ্যে ঈদে অতিরিক্ত উৎসব-আনন্দ করা উচিত না। যতটুকু না করলেই নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ততটুকুই আনন্দ করা উচিত। করোনা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। স্বজনদের মৃত্যুর কারণ ঈদ আনন্দ করতে আসা ব্যক্তি যাতে না হয়, ঈদ আনন্দ যাতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ না হয়; সেজন্য সকলের স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানাটাই কাম্য। সবমিলিয়ে এবারের ঈদ আসলেই আনন্দের নয়, প্রার্থনার। প্রার্থনা করোনা থেকে মুক্তির, মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক হবার। প্রার্থনা নির্যাতিত মুসলিমদের মুক্তির।