আনিসুর রহমান এরশাদ
সাংবাদিকতায় পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মিডিয়া ও সাংবাদিকতা আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে হলে বর্তমান পরিবর্তনকে বুঝাও জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে সাবস্ক্রিপশন ফি নিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিজনেস মডেল বাড়ছে। সোস্যাল মিডিয়াগুলোও নিউজ পড়তে সাবস্ক্রাইব করা, সাবস্ক্রিপশন ফি নেয়ার চিন্তা করছে।
‘নিউজ সাবস্ক্রাইব’ অপশন চালুর পদক্ষেপ দিন দিন বাড়ছে। খুব কম ব্যয়েই নতুন অনলাইন মিডিয়া সংস্থা শুরু হচ্ছে। পর্যাপ্ত ভালো কনটেন্ট পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারলে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়ও করা যাচ্ছে। কে সাংবাদিক এবং কে সাংবাদিক নয় সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা চলে যাচ্ছে পাঠকদের কাছে। একে একে মুদ্রিত সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপনগুলি আরো স্মার্ট হবে।সাংবাদিকতা সেবায় পরিণত হবে। সফটওয়্যার-রোবটের কারণে চাকরিচ্যুতি ঘটবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার বাড়বে। নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন হবে। সস্তা পথ বেছে না নিয়ে মান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। গতানুগতিক বিজ্ঞাপনে নির্ভরশীলতা কমবে। নেটওয়ার্ক সোসাইটিতে সাংবাদিকতা হবে ডিজিটাল যুগের উপযোগী স্মার্ট সাংবাদিকতা।
চলমান সংকটও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পথ নির্দেশ করছে। সংবাদের উৎস হিসেবে ব্যবহার বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের। দ্রুততর, সস্তা এবং ব্যক্তিগতভাবেও করা সহজ হওয়ায় মিডিয়ার ডিজিটাল রুপের প্রসার ঘটছে। ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক স্মার্ট সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্যক্তিভেদে পছন্দানুযায়ী সংবাদ উপস্থাপন করবে। লেখা-ছবি-ভিডিও-অডিও সমন্বয় হবে, আরও ভালো ভিডিও এবং ইন্টারেক্টিভ গ্রাফিক্স ব্যবহার করবে।উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সামর্থ্য গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।
একদিকে স্বল্প ব্যয়েও সচল থাকতে পারছে সংস্থা। সাংবাদিক সংজ্ঞায়নে নির্দিষ্ট বিধি আরও অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সাংবাদিকতা গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। সংবাদ পড়া এবং সংবাদ দেখার জন্য ডেস্কটপগুলির চেয়ে মোবাইল ডিভাইসগুলি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। কনটেন্টকে ভোক্তার উপযোগী বা ভোক্তাবান্ধব করতে দেখা যাচ্ছে।
কনটেন্টকে পাঠকবান্ধব বা দর্শকবান্ধব করে স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। পাঠক-দর্শক সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ খুঁজছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতা পেশার ক্ষেত্রে একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কিছু মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা হিসাবে দেখছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের আবেগ বুঝার মতো সফটওয়্যারও তৈরি হচ্ছে। অ্যালগরিদম ব্যবহার করে মুখের অঙ্গভঙ্গি থেকেই মৌলিক মানবিক অনুভূতিগুলি সনাক্ত করতে, প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে এবং রিপোর্ট করতে পারছে। এভাবে প্রযুক্তি সাংবাদিকতার চিরচেনা জগতকে বদলে দিয়ে আগামীর সাংবাদিকতায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতা বিদ্যমান সাংবাদিকতা শিল্পকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় সাংবাদিকতা পেশাটির মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে। রোবট সাংবাদিকতার এমনভাবে উত্থান ঘটছে যে, এরা শুধু সংবাদ লেখবেই না উন্নততর বিশ্লেষণ যুক্ত করে গুণমানসম্মত স্মার্ট কনটেন্ট তৈরি করবে। সফ্টওয়্যারই সাংবাদিকতা ও মিডিয়া খাতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করবে।
জনপ্রিয় হচ্ছে- স্মার্টফোন জার্নালিজম, রোবট সাংবাদিকতা, সিটিজেন জার্নালিজম, মোবাইল জার্নালিজম, উদ্যোক্তা সাংবাদিকতা, কনভারজেন্স জার্নালিজম, ওয়ার্ডস্মিথ সফটওয়্যার, কুইল প্রযুক্তি, নতুন নতুন সফটওয়্যার, বুদ্ধিমান কম্পিউটার, অটোমেটেড সাংবাদিকতা, পারসপেকটিভ এপিআই টুল, নিউজহুইপ, ওপেন সোর্স নিউজবট, স্বয়ংক্রিয় তথ্য যাচাই, বড় ডেটাবেস বিশ্লেষণ, ইমেজ রিকগনিশন, স্বয়ংক্রিয় ভিডিও কনটেন্ট এবং বহুমাধ্যমকেন্দ্রিক জার্নালিজম।
সূত্র: poribar.net