মহিদুল খান
সবে মাত্র চলে যাওয়া বছরটা বেশ ক’টি অঘটন আর রোগ-শোকের মধ্যে দিয়েই কেটেছে বাংলাদেশের। তারপরও মোটা দাগে বলতে গেলে কোমর সোজা করেই হেঁটেছে বাংলাদেশ। ফি বছরের মতোই শুরুটা ঠিকঠাকই থাকলেও বয়স তিন মাসে বছর পা দিতেই ধাক্কা দেয় মরণঘাতি ভাইরাস করোনা। আলোচনায় ছিল ধর্ষণসহ আমলযোগ্য বেশ কিছু অপরাধের ঘটনা। তারপরও সব কিছু ছাপিয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর গড়গড় করে সামনে চলা অর্থনীতির চাকা।
মার্চের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে আসে করোনা। মরণঘাতি এই রোগ চীনের উহানে ছড়ায় তার আগের বছরের শেষের দিকে। নতুন এ রোগ সামাল দিতে হিমশিম খায় বিশ্ব মোড়লরা। প্রাণ বাঁচাতে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় লকডাউন ঘোষণার মাধ্যমে।এতে বিপর্যয় ঘটে বিশ্ব অর্থনীতিতে, ছন্দ পতন ঘটে স্বাভাবিক জীবনে। বলতে গেলে যান্ত্রিক বিশ্বের নেমে আসে স্থবিরতা। এমন পরিস্থিতিতেও অর্থনীতি সচল রাখে বাংলাদেশ।পৃথিবীর প্রায় সব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। বিশ্বের ধ্বণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ২২ দেশের মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকার করে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৯০০ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়।
করোনার শুরুতে গণপরিবহন চলাচল আর অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। কিন্তু সে সময়টা বেশিদিন ধরে রাখা হয়নি। জীবন আর জীবিকার প্রশ্নে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বাকি সব খুলে দেওয়া হয় করোনার স্বাস্থ্য বিধি মানার শর্তে। ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’ এ জাতি পুর্বাভিজ্ঞতা ছাড়াই মোটামুটি টক্কর দিয়ে চলছে করোনার সঙ্গে।এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেন তিনি।এতে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
করোনাকালেই বড় প্রাপ্তিটা ছিল স্বপ্নের সেতু পদ্মাই। একেবারে নিজেদের অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মাকে বশে এনে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে- ‘আমরাও পারি’। করোনাকালেও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসি বাংলাদেশিরা। সচল রাখা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত গার্মেন্টস শিল্প।
প্রাপ্তিতায় বড় কলঙ্ক লাগায় ধর্ষণের ঘটনা।স্মরণকালের নারীর ওপর সহিংসতা ঘটে এ বছরেই।আগের বছরের চেয়ে গত বছর ধর্ষণ ঘটনায়ও তুলনামুলক বাড়ে।আমলযোগ্য এ অপরাধ দমনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আইন করে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যু দণ্ড করা হয়। অপচেষ্টা করলেও সরকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর দমন নীতির কারণে মাথা চাড়া দিতে পারেনি মৌলবাদী চক্র।বিছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল। স্বস্তিতেই ছিলেন এ দেশের শ্রেণী ও পেশার মানুষ।